সরকার গড়তে প্রস্তুত পিটা, হতে চান ‘সবার প্রধানমন্ত্রী’

থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রপন্থী মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির (এমএফপি) নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত
ফাইল ছবি: এএফপি

থাইল্যান্ডে প্রায় এক দশক ধরে সেনাসমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। এবারের নির্বাচনে ভোটাররা সেনাসমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বেছে নিয়েছেন অপেক্ষাকৃত তরুণদের। নির্বাচনের পর গতকাল সোমবার নিজেদের বিজয়ী দাবি করে এমনটাই বলেছেন থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রপন্থী মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)।

রাজধানী ব্যাংককে এমএফপির সদর দপ্তরে পিটা লিমজারোয়েনরাত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি পিটা লিমজারোয়েনরাত। আমি থাইল্যান্ডের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। আমরা সরকার গড়তে প্রস্তুত রয়েছি।’ এ সময় ‘সবার প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তরুণ এ নেতা।

গত রোববারের নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছে এমএফপি। তারুণ্যনির্ভর দলটি ৫০০ আসনের নিম্নকক্ষে সর্বোচ্চ ১৫১ আসন পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাসিত নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার ফেউ থাই পেয়েছে ১৪১ আসন। অন্যদিকে নির্বাচনী ফলাফলে পঞ্চম হয়েছে ক্ষমতাসীন দল।

এখন জোট সরকার গড়তে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে এমএফপি ও ফেউ থাই। তবে এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য বিষয় একসময়ের অভ্যুত্থানের হোতা থাই প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচাকে ভোটারদের প্রত্যাখ্যান করা। প্রাউত চান-ওচাকে দেশটির অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও অধিকার রক্ষায় সরব ব্যক্তিদের ওপর দমন–পীড়ন চালানোর জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

এমএফপির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী পিটা লিমজারোয়েনরাত জানিয়েছেন, তিনি ছয়টি দলকে সঙ্গে নিয়ে জোট গড়তে যাচ্ছেন। এ জোটে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার ফেউ থাই থাকছে। এই দুই দল এক জোটে এলে সরকার গঠনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

পিটা লিমজারোয়েনরাত জানান, তিনি ফেউ থাইয়ের নেতা পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং সরকার গঠনের জন্য জোট গড়তে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পিটা লিমজারোয়েনরাত বলেন, ‘পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। এটাই পরিবর্তনের উপযুক্ত সময়। মানুষ অনেক সহ্য করেছে।’

ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা এই দুই দল সব মিলিয়ে নিম্নকক্ষের ৫০০ আসনের মধ্যে ২৯২টি পেতে পারে। অন্যদিকে সেনাসমর্থিত দুটি রাজনৈতিক দল সম্মিলিতভাবে ৭৬টি আসনে জয় পেতে পারে। কিন্তু এই ফলাফল চূড়ান্ত কথা নয়। কেননা, এর আগে সেনা অভ্যুত্থান কিংবা আদালতের রায়ে নির্বাচনের ফল ছুড়ে ফেলার ইতিহাস থাইল্যান্ডে রয়েছে।

এদিকে এমএফপি জানিয়েছে, দলটি সরকার গড়ার পর থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে প্রণীত কঠোর আইনে সংস্কার আনবে। এমনটা হলে দেশটির শক্তিশালী রাজতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের মিত্রতার সঙ্গে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরোধের পথ উন্মুক্ত করতে পারে।

থাই রাজনীতির নতুন শক্তি এমএফপি তারুণ্যনির্ভর। ২০২০ সালে দেশটিতে তরুণদের যে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছিল, সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দলটি নির্বাচনী সাফল্য পেয়েছে। অন্যদিকে সাবেক জেনারেল প্রাউত চান-ওচা ৬৯ বছর বয়সের একজন রক্ষণশীল নেতা। তাই তরুণ ভোটাররা পরিবর্তনের আশায় তারুণ্যকে বেছে নিয়েছেন।

২০০২ সালের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন বিয়েম। এখন তাঁর বয়স ২৯ বছর। এমএফপির রাজনীতিকে সমর্থন করেন তিনি। গতকাল বিয়েম বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমার দেশের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে। আর এ জন্য মানুষের চোখ খুলে গেছে।’

এখন পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষে থাই নির্বাচন কমিশন যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা গেছে, এমএফপি প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখের মতো ভোট পেয়েছে। ফেউ থাই পেয়েছে ১ কোটি ৮ লাখের মতো ভোট। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড থাই ন্যাশনাল পার্টি পেয়েছে ৪৭ লাখ ভোট। এ পরিসংথ্যান থাইল্যান্ডের রাজনীতির বাঁকবদলের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।