পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট বিপজ্জনক, আগেই সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা

তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আজ সোমবার আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ভূমিকম্প
ছবি: রয়টার্স

তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই দেশ। এরই মধ্যে ভূমিকম্পে ১ হাজার ৪০০–এর বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে। তুরস্ক–সিরিয়া ছাড়াও আশপাশের দেশগুলো এই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে। এটা এত শক্তিশালী ছিল, ভূমিকম্প টের পাওয়া গেছে উত্তর আমেরিকার দ্বীপদেশ গ্রিনল্যান্ডেও।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়া—দুই দেশেই প্রাণহানির সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। ভূপ্রাকৃতিক কারণে অঞ্চলটি যে বিপজ্জনক, তা অবশ্য অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন বিজ্ঞানীরা।

বিবিসি ও আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূপ্রাকৃতিক দিক অস্থিতিশীল এক অঞ্চলে। এখানে রয়েছে পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট। তুরস্কের দক্ষিণ–পূর্ব সীমান্তের দক্ষিণ পশ্চিম থেকে উত্তর পশ্চিম বরাবর এই ফল্টের অবস্থান।

কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভূত্বকের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক ফল্ট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট লাইন বলা হয়। পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টের অবস্থান অ্যারাবিয়ান প্লেট ও আনাতোলিয়ান প্লেটের মাঝে। ফল্ট লাইন দিয়ে দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।

পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টকে বহু আগে থেকেই খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করে সতর্ক করে আসছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। যদিও গত ১০০ বছরের বেশি সময়ে সেখানে কোনো উল্লেখযোগ্য সক্রিয়তা দেখা যায়নি। তবে তুরস্কের ইতিহাসে ভয়াবহ বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পের জন্য দায়ী এই পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট।

বলা যায়, ১৮৮২ সালের ১৩ আগস্টের ভূমিকম্পের কথা। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪, অর্থাৎ আজকের কম্পনের চেয়ে সামান্য কম। ওই ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তুরস্কের আলেপ্পো শহরে ৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর ওই ভূমিকম্পের জেরে পরের প্রায় এক বছর ধরে ওই অঞ্চলে ছোট ছোট কম্পন হয়েছিল।

বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি তুরস্ক। পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট ছাড়াও দেশটির উত্তরে নর্থ আনাতোলিয়ান ফল্ট নামের আরেকটি ফল্ট রয়েছে। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ১৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর আগে ১৯৩৯ সালে দেশটির এরজিনকান প্রদেশে এক ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় ৩০ হাজারের বেশি মানুষের।