মালালা ইউসুফজাই
মালালা ইউসুফজাই

সাক্ষাৎকারে মালালা

নারীদের অধিকার এত সহজে বিলীন হবে কল্পনা করিনি

 রাইফেলের গুলি কণ্ঠরোধ করতে পারেনি তাঁর। সেই গুলিই বরং তাঁকে আরও দৃঢ়চেতা করে তুলেছে। আফগানিস্তানের নারীদের অধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার হয়েছেন। লড়ছেন এই নারীদের পক্ষে। তিনি মালালা ইউসুফজাই। তবে আক্ষেপও রয়েছে তাঁর। আফগানিস্তানের নারীদের অধিকার যে এত সহজে হারিয়ে যাবে, তা কখনো ভাবেননি তিনি।

আফগানিস্তান এখন তালেবানের অধীন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে দেশটি শাসন করছে তারা। এই সময়টাতে সেখানে নারীদের অধিকার ব্যাপকভাবে খর্ব করা হয়েছে। তালেবানকে ঘিরে মালালার সঙ্গেও ঘটেছিল নির্মম এক ঘটনা। সে আরও এক যুগ আগের কথা। ২০১২ সালে স্কুলের বাসে বসে থাকার সময় এক তালেবান সদস্যের গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন তিনি।

সেবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন মালালা। এরপর অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার থাকায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বিবিসির এশীয় নেটওয়ার্ককে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মালালা। সেখানে আফগানিস্তানের নারী অধিকার নিয়ে মালালা বলেছেন, ‘আমি কখনোই কল্পনা করিনি, নারীদের অধিকার এত সহজে হারিয়ে যাবে।’

আফগানিস্তানের অধিকারবঞ্চিত নারীদের ভবিষ্যৎটা ‘অন্ধকার’ বলে মনে হয়েছে ২৭ বছর বয়সী মালালার। তিনি বলেন, ‘অনেক মেয়েই নিজেদের আশাহীন, হতাশাজনক এক পরিস্থিতির মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর কোনো পথ দেখছেন না তাঁরা।’

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের ‘নীতি–নৈতিকতাবিষয়ক আইনগুলো’র কারণে কয়েক ডজন অধিকার হারিয়েছেন দেশটির নারীরা। তবে মালালা মনে করেন আফগানিস্তানের নারীরা ‘সবকিছুই’ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা (তালেবান) জানে নারীদের অধিকার কেড়ে নিতে হলে আপনাকে একেবারে ভিত্তি থেকে শুরু করতে হবে। আর ভিত্তিটা হলো শিক্ষা।’

আফগানিস্তানে পশ্চিমা–সমর্থিত সরকারকে হটিয়ে ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসে তালেবান। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে দেশটিতে ১০ লাখের বেশি মেয়ে শিশু ও কিশোরীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। আর ২০২২ সালে প্রায় এক লাখ নারী শিক্ষার্থীকে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় কোর্সে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে নিজের প্রযোজনা করা চলচ্চিত্র ব্রেড অ্যান্ড রোজেস–এর কথাও বলেন মালালা। তাতে তুলে ধরা হয়েছে তালেবান সরকারের আমলে আফগানিস্তানের তিন নারীর জীবন। তাঁদের একজন জাহরা। দাঁতের এই চিকিৎসককে তাঁর সেবা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আরেকজন তারানোম। তালেবানের ভয়ে তিনি সীমান্ত পেরিয়ে ভিনদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আর তৃতীয় নারীটি হলেন সরকারি কর্মচারী শরিফা। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তিনি চাকরি হারিয়েছেন।

এই চলচ্চিত্র এখনো পর্দায় আসেনি। আর চলচ্চিত্রটি শুধু তিন নারীকে ঘিরে নয় বলে জানান মালালা। তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ২ কোটি মেয়েশিশু, কিশোরী ও নারীর অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে, যাঁদের গল্পগুলোকে এই চলচ্চিত্রে স্থান দেওয়া সম্ভব হয়নি।’