আফগানিস্তানে হাজারো মানুষের সামনে নারীসহ ২৭ ব্যক্তিকে বেত্রাঘাত করেছে তালেবান। খবর এএফপির।
খুনের দায়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড প্রকাশ্যে কার্যকরের এক দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানে বেত্রাঘাতের এ ঘটনা ঘটল।
গত বছর দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে যায়। এই দফায় ক্ষমতায় আসার পর তালেবান প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল।
প্রকাশ্যে শাস্তি কার্যকর করা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন তালেবানের প্রধান মুখপাত্র। তিনি এই সমালোচনাকে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব বলে অভিহিত করেছেন।
তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, এই সমালোচনার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে মুসলমানদের বিশ্বাস, আইন ও একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের প্রতি বহিরাগতদের শ্রদ্ধা নেই।
এক বিবৃতিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, গতকাল আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকরে ২৭ ‘অপরাধীকে’ বেত্রাঘাত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে নয়জন নারী।
এলাকাটি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়, সমকামিতা, প্রতারণা, ভুয়া সাক্ষী, জালিয়াতি, মাদক বেচাকেনা, লাম্পট্য, বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া, হাইওয়েতে ডাকাতি, অবৈধ সম্পর্কের মতো অপরাধের জন্য এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আসামিদের প্রত্যেকে আদালতের সামনে তাঁদের অপরাধ স্বীকার করেছেন। অপরাধ স্বীকার করার জন্য কাউকে কোনো বলপ্রয়োগ করা হয়নি। শাস্তির বিষয়ে আসামিদের কোনো আপত্তি ছিল না।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, শহরটির একটি স্টেডিয়ামে এক হাজারের বেশি মানুষের সামনে ২৭ জনকে বেত্রাঘাত করা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ২০ থেকে ৩৯টি বেত্রাঘাত করা হয়েছে। এবার তালেবান ক্ষমতায় আসার পর গত মাসে প্রথমবার তারা প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের সাজা কার্যকর করে। তারপর দেশটিতে একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে।
গত মাসে দেশটির বিচারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তালেবানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। বৈঠকে কিছু অপরাধের জন্য শরিয়াহ আইনে শাস্তি প্রদান করতে বিচারকদের নির্দেশ দেন তিনি।
আফগানিস্তানে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তালেবানের প্রথম শাসনামলে বেত্রাঘাত-পাথর নিক্ষেপের মতো কঠোর শরিয়াহ আইনের সাজা কার্যকর ছিল। তবে তালেবান গত বছর ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা এবার অতীতের মতো দেশ শাসন করবে না। কিন্তু এখন তালেবানের আবার পুরোনো ধারায় ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।