নৌকায় আটকে পড়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের পাইনুংয়ে
নৌকায় আটকে পড়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের পাইনুংয়ে

২০২৩ সালে সাগরে ডুবে ৫৬৯ রোহিঙ্গার প্রাণহানি

গত বছর প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের মধ্যে ৫৬৯ জন মারা গেছে, নয়তো নিখোঁজ হয়েছে।

২০২৩ সালে সাগরে ডুবে অন্তত ৫৬৯ রোহিঙ্গা মারা গেছে, নয়তো নিখোঁজ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ হিসাব দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। সংস্থাটি বলছে, ২০১৪ সালের পর গত বছরই সাগরে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে।

ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে গত বছর প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় এসব রোহিঙ্গার মধ্যে ৫৬৯ জন মারা গেছে, নয়তো নিখোঁজ হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি বলেছে, ২০১৪ সালের পর থেকে সাগরে গত বছর সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা মারা গেছে, নয়তো নিখোঁজ হয়েছে। ওই বছর (২০১৪) সর্বোচ্চ ৭৩০ রোহিঙ্গা মারা যায়, নয়তো নিখোঁজ ছিল।

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ম্যাথিউ সল্টমার্শ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গত বছর সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতি আটজন রোহিঙ্গার মধ্যে একজন মারা গেছে, নয়তো নিখোঁজ হয়েছে। এতে আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী জলপথের একটি হয়ে উঠেছে।’

ইউএনএইচসিআরের বিবৃতি অনুযায়ী, গত বছর সাগর পাড়ি দিতে মৃত্যুর মুখ থেকে যেসব রোহিঙ্গা ফিরে এসেছে, তাঁরা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। তাদের মধ্যে নারী হওয়ার কারণে সহিংসতার শিকার হওয়ার কথাও বলেছে কেউ কেউ।

সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা এসব রোহিঙ্গার বেশির ভাগ শিশু ও নারী। তাদের প্রায় ৬৬ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী। অল্প কিছু মিয়ানমারেরও আছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান শুরু করে। এতে কক্সবাজার সীমান্তবর্তী রাজ্যটি থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে।

২০২১ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান করে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে জান্তা সরকার তেমন আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণে এসব রোহিঙ্গার দেশে ফেরা এখন অনিশ্চিত।

ভিনদেশে শরণার্থীর জীবন যাপন করা রোহিঙ্গারা তাই সাগর পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিচ্ছে তারা। আর সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এভাবে শত শত রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটছে সাগরেই।

ইউএনএইচসিআর তাদের বিবৃতিতে ২০২৩ সালের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি বলছে, গত বছরের নভেম্বরের ওই ঘটনায় প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা সাগরে প্রাণ হারায়। আন্দামান সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় তাঁদের বহন করা নৌকা ডুবে গেলে এসব রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছিল।

সাগরে এভাবে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি ঠেকাতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি বলছে, দুই সাগরের উপকূলে বেশ কিছু দেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করে। অথচ তাদের চোখের সামনে বেপরোয়া এসব মানুষকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। সময়মতো উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিতে পারলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।

ইউএনএইচসিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মানবিক দিক বিবেচনায় প্রাণহানি ঠেকানো ও সাগরে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়া এসব মানুষকে উদ্ধার করা বাধ্যতামূলক একটি কাজ। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের অধীনেও তাঁদের রক্ষা করা কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।’