মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি ‘সুস্থ’ আছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক জান্তা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিভিন্ন মামলায় তাঁকে নানা মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ‘গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে’ গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তথ্য বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল জো মিন তুন নিশ্চিত করেন, থাইল্যান্ডের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রামুদউইনাই ৯ জুলাই মিয়ানমার সফরকালে সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সু চি ‘সুস্থ’ আছেন।
অভ্যুত্থানের পর এবারই প্রথম কোনো বিদেশি কূটনীতিক বা রাজনীতিবিদকে সু চির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে অনেক বিদেশি বারবার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েও অনুমতি পাননি।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস ও দুর্নীতির অভিযোগে ৭৮ বছর বয়সী সু চিকে রুদ্ধদ্বার আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেওয়া হয়। অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে মনে করা হয়।
স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের তথ্য বিভাগের প্রধান মেজর জেনালের মিন তুন থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন ও সু চির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠককে ‘বাধাহীন’ ছিল বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাঁদের মধ্যকার ওই বৈঠক ৯০ মিনিট স্থায়ী ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা তাঁদের বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না।’
জাকার্তায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের কয়েক দিন আগে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন নেপিদো সফরে যান। থাইল্যান্ডের বিদায়ী সেনা-সমর্থিত সরকারের উদ্যোগ ও উদ্বেগ সম্পর্কে মিয়ানমারের অনেকটা একঘরে জেনারেলদের জানাতে তিনি মিয়ানমার সফর করেন।
জাকার্তায় সম্মেলন শেষে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জানান, মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র যারা সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়, তাদের পক্ষ থেকে তিনি নেপিদো সফরে যান।
পাঁচ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে আসিয়ানের সম্মেলনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই পাঁচ প্রস্তাবের অন্যতম হচ্ছে সহিংসতার অবসান ও সংকটের সমাধান।
জাকার্তায় সম্মেলন শেষে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একসঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলেন, যাতে মাঝখানে ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেত্নো মারসুদি। আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের তিনিই একমাত্র নারী।
প্রস্তাবে ‘গঠনমূলক সংলাপ’, অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, আসিয়ান বিশেষ দূত নিয়োগ, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য আসিয়ান প্রতিনিধিদলের সফরের ব্যবস্থা এবং মানবিক সহায়তার মতো বিষয় ছিল।
আসিয়ান নেতাদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও অং সান সু চির সঙ্গে আসিয়ান কর্মকর্তাদের দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঐকমত্যের বিষয়ে সম্মতি দিলেও মিয়ানমারের সংকটের দিন দিন অবনতি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিয়ানমারে তৎপরতার বিষয়ে থাইল্যান্ডের ব্রিফিংয়ের কথা স্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, বেশির ভাগ সদস্যদেশ থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরকে ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হিসেবে বিবেচনা করেন।
অবশ্য আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও বলেছেন, সংকট সমাধানে এখনো তাঁদের কূটনৈতিক উদ্যোগের মূল ভিত্তি হচ্ছে পাঁচ দফা প্রস্তাব। একই সঙ্গে তাঁরা অব্যাহত সহিংসতার নিন্দা জানান।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যৌথ ইশতেহারে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সহিংসতা বন্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সব দলের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংলাপ আয়োজনের আহ্বান জানান তাঁরা।
আলাদা বিবৃতিতে মালয়েশিয়া মিয়ানমারের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা আসিয়ান সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের ওপর জোর দেয়।