থাইল্যান্ডে হাতির বিরল যমজ শাবকের জন্ম

থাইল্যান্ডে একটি এশিয়ান মা হাতি বিরলভাবে যমজ শাবকের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ বলছেন হাতির দেখভালকারী ব্যক্তিরা।

যমজ শাবকের জন্ম দেওয়া ৩৬ বছর বয়সী হাতিটির নাম চামচুরি। হাতিটি যমজ শাবক প্রসব করবে বলে আগে কারও ধারণা ছিল না।

থাইল্যান্ডের আয়ুথায়া এলিফ্যান্ট প্যালেস অ্যান্ড রয়্যাল ক্রালে গত সপ্তাহে (শুক্রবার) মা হাতিটি প্রথমে একটি পুরুষ শাবক প্রসব করে। তখন পার্কটির কর্মীরা ভেবেছিলেন, প্রসব শেষ।

কিন্তু প্রথম শাবকটিকে পরিষ্কারসহ তাকে দাঁড়াতে সাহায্যের করার সময় কর্মীরা ধপ করে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পান। তাঁরা বুঝতে পারেন, চামচুরি আরেকটি শাবকের জন্ম দিয়েছে। দ্বিতীয়টি মেয়ে শাবক।

দ্বিতীয় শাবকের প্রসব মা হাতিকে আতঙ্কিত করে তোলে। আতঙ্কিত মা হাতি যাতে তার দ্বিতীয় শাবকটির ওপর পা দিয়ে না ফেলে, সে জন্য দ্রুত তৎপর হয় তত্ত্বাবধায়কেরা। মা হাতিকে সামলাতে গিয়ে একজন তত্ত্বাবধায়ক আহত হন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার নাটকীয় ভিডিও দেখা গেছে। এতে ঘটনাস্থলে হাতির তত্ত্বাবধায়কদের ভিড় দেখা যায়। তাঁরা দ্রুততার সঙ্গে দ্বিতীয় শাবকটিকে মা হাতির কাছ থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। হাতির তত্ত্বাবধায়কেরা স্থানীয়ভাবে ‘মাহুত’ নামে পরিচিত।

সেভ দ্য এলিফ্যান্টস নামে একটি গবেষণা সংস্থার তথ্যমতে, মাত্র এক শতাংশ ক্ষেত্রে হাতির যমজ শাবকের জন্ম হয়। আবার যমজ শাবকের পৃথক লিঙ্গের (ছেলে-মেয়ে) বিষয়টি আরও বিরল।

থাই পশুচিকিৎসক লার্ডথংটার মিপান বিবিসিকে বলেন, তাঁরা দ্বিতীয় শাবকটিকে টেনে মা হাতির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেন। তারপর শাবকটি উঠে দাঁড়ায়। এই ঘটনায় তাঁরা সবাই উল্লাস প্রকাশ করেন। কারণ, এটি একটি অলৌকিক ঘটনা।

হাতির এই পার্কেই বেড়ে উঠেছেন মিপান। তিনি নিজেও যমজ সন্তানের মা। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় হাতির যমজ শাবক দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবাই তা দেখতে পারেন না। কারণ, এটি খুব বেশি ঘটে না।’

দ্বিতীয় শাবক প্রসবের পর মা হাতিটিকে সামলাতে গিয়ে পার্কের ৩১ বছর বয়সী মাহুত চারিন সোমওয়াংয়ের পা ভেঙে যায়।

চারিন বলেন, যমজ শাবক জন্মের ঘটনায় তিনি এতই খুশি ছিলেন যে নিজের পায়ের ব্যথা পর্যন্ত টের পাচ্ছিলেন না। পরে যখন তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন আঘাতের মাত্রা বুঝতে পারেন।

পার্কটিতে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন চারিন। তিনি বলেন, এটা স্বাভাবিক যে প্রসবের পর মা হাতি তার শাবককে লাথি বা ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করবে। তিনি আশঙ্কা করছিলেন, মা হাতিটি তার দ্বিতীয় শাবকটিকে আঘাত করতে পারে। তাই তিনি দ্রুত এগিয়ে যান। মা হাতির সম্ভাব্য আঘাত থেকে দ্বিতীয় শাবকটিকে রক্ষার চেষ্টা করেন।

থাইল্যান্ডে হাতি পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। দেশটির একটি জাতীয় প্রতীকও হাতি।