ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন গড়াল দ্বিতীয় ধাপে। ইরানে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনায় কোনো প্রার্থীই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট নিশ্চিত করতে পারেননি। এমন অবস্থায় গতকাল দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী ৫ জুলাই দেশটিতে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের নির্বাচন কার্যালয়ের মুখপাত্র মোহসেন ইসলামি গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। দেশটির জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুক্রবারের নির্বাচনে ২ কোটি ৪৫ লাখ ভোট পড়েছে।
ভোট গণনায় দেখা গেছে, সংস্কারপন্থী আইনপ্রণেতা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাসুদ পেজেশকিয়ান ১ কোটি ৪ লাখ ভোট পেয়ে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তাঁর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে থাকা কট্টরপন্থী প্রার্থী সাইদ জালিলি পেয়েছেন ৯৪ লাখ ভোট। এই দুই নেতা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকেন। পেজেশকিয়ানকে পশ্চিমপন্থী আর জালিলি ঘোর পশ্চিমাবিরোধী বলে মনে করা হয়।
নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেওয়া অপর দুই প্রার্থী পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তফা পুরমোহাম্মদি অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন। বাগের গালিবাফ পেয়েছেন ৩৩ লাখ ভোট আর মোস্তফা পুরমোহাম্মদি পেয়েছেন ৩ লাখ ৯৭ হাজার ভোট।
আগামী ৫ জুলাই নির্বাচনে যে দুজনের মধ্যে লড়াই হবে জেনে নিন তাঁদের সম্পর্কে :
সাইদ জালিলি
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার যাঁরা সাইদ জালিলিকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের চোখে অন্য সব প্রার্থীর চেয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী হলেন ৫৮ বছর বয়সী সাইদ জালিলি। তিনি অতি রক্ষণশীল ও অটল পশ্চিমাবিরোধী অবস্থানের জন্য ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ তিনি।
আগামী ৫ জুলাই সংস্কারপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ানের মুখোমুখি হওয়ার আগে তিনি দেশটির বিভক্ত রক্ষণশীল সমর্থকদের একত্র করার চেষ্টা করবেন।
১৯৬৫ সালে ইরানের মাশাদে জন্মগ্রহণ করা জলিলি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। মৃদুভাষী হলেও অনমনীয় এবং রক্ষণশীল ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ধরে রাখার পাশাপাশি তিনি কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি জ্যেষ্ঠ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থা সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে খামেনির প্রতিনিধিদের একজন। জালিলি ইরান-ইরাক যুদ্ধে লড়েছিলেন। যুদ্ধে তাঁর ডান পা কেটে যায়। ইরানের পারমাণবিক চুক্তির মধ্যস্থতায় তিনি কাজ করেছিলেন। এ সময় তিনি অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছিলেন।
জালিলি তেহরানের ইমাম সাদেগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডক্টরেট করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের সময় তিনি ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের উপপরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৃতীয় হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় ১১ শতাংশ ভোট পান। ২০২১ সালে ইব্রাহিম রাইসিকে সমর্থন দিয়ে নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে আসেন।
এবারের প্রার্থীদের মধ্যে পেজেশকিয়ানই সবচেয়ে বয়স্ক এবং একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী। ১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া পেজেশকিয়ান একজন হার্ট সার্জন। ২০০৮ সাল থেকে টানা উত্তর-পশ্চিমের নগরী তাবরিজ থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন তিনি।
পেজেশকিয়ান বরাবর ইরানের বর্তমান শাসকদের সমালোচনা করে এসেছেন। ইরানের সাবেক সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। যে বছর (২০২১ সাল) রাইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, সে বছর পেজেশকিয়ান অন্য সংস্কারপন্থী ও মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিলেন।
২০২২ সালে তেহরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার পর ইরানজুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, সে সময় রাইসি সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পেজেশকিয়ান।