জি-২০ সম্মেলন

পরবর্তী মহামারির প্রস্তুতিতে বৈশ্বিক তহবিল গঠন

জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (মাঝে)
ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের জোট জি-২০ সম্মেলন শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে। সম্মেলন শুরুর আগেই রোববার জি–২০–এর স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রীরা পরবর্তী মহামারি মোকাবিলায় ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দিলেন। তবে এবারের সম্মেলনের আয়োজক দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, যে তহবিল গঠন করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বের অনেক দেশ। এ ধরনের মহামারি মোকাবিলায় আগে কোনো তহবিল ছিল না। পরবর্তী সময়ে কোনো মহামারি এলে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে নানা উদ্বেগ রয়েছে। রোববার এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি বক্তব্য দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস।

উইদোদো বলেন, ‘জি–২০–এর নেতারা মহামারি প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির জন্য একটি তহবিল গঠনে সম্মত হয়েছেন। জি–২০–এর দাতা ও জি–২০–এর সদস্যের বাইরের দেশগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা এতে সহযোগিতা করছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। পরবর্তী মহামারি মোকাবিলায় ৩ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

উইদোদো আরও বলেন, ‘মহামারির মুখে আমাদের টিকে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মহামারি যাতে আর কোনো জীবন কেড়ে নিতে না পারে বা আমাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থান নড়বড়ে না করতে পারে, তা ঠিক করতে হবে।’

মহামারি প্রতিরোধ তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাড়ে চার কোটি মার্কিন ডলার দেওয়া হচ্ছে, যা মোট তহবিলের এক–তৃতীয়াংশ। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, ‘বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় জি–২০ কী করতে পারে, তার উদাহরণ হচ্ছে এই যৌথ তহবিল। আমরা যা অর্জন করেছি, তার জন্য আমি গর্বিত। এ বছর আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য অবকাঠামোর বিষয়টি শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।’

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আগামী মঙ্গলবার জি-২০ সম্মেলন শুরু হবে।

এবারের করোনা মহামারি ছড়ানোর একটা সময় ইন্দোনেশিয়া মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশটিতে করোনার ডেলটা ধরন ছড়ানোর পর বিশ্বে করোনার কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটি।

করোনা রোগী ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে দেশটির স্বাস্থ্য খাত ভীষণ চাপে পড়ে। এ সময় জাকার্তা নিজস্ব টিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়। বিশ্বের ধনী দেশগুলো এ সময় টিকা মজুত করতে শুরু করলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে হতাশা দেখা দিতে শুরু করে।

মহামারি তহবিলে দাতাদেশগুলোর মধ্যে থাকছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। এর আগে ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী মুলিয়ানি ইন্দ্রবতী বলেন, সৌদি আরবও এ তহবিলে সহায়তা করতে চেয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস বিশ্বের অন্য দেশগুলোর কাছে তহবিলে অর্থ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একাধিক সংকটের সময়ে মিলিত হয়েছি। এই নতুন তহবিল একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াবে। এটি নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসংকটের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে সহায়তা করবে।’

মালপাস আরও বলেন, ‘এই মহামারি তহবিল বিশ্বকে আরও নিরাপদ করতে সাহায্য করতে পারে।’

সম্মেলন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি

এবারের জি–২০ সম্মেলন রাজধানী জাকার্তার পরিবর্তে বালির একটি রিসোর্টে আয়োজন করছে ইন্দোনেশিয়া। সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারের সম্মেলনে জি–২০–এর নেতাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক নেতা। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস থাকছেন পর্যবেক্ষক হিসবে। বালির নুসা দুয়া এলাকায় ১৮ হাজারের বেশি নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

জি–২০ সম্মেলন ঘিরে প্রত্যাশা

করোনা মহামারির পর বিশ্ব এখন একাধিক সংকট মোকাবিলা করছে। জি–২০ সম্মেলন ঘিরে তাই প্রত্যাশা অনেক বেশি। এবারের সম্মেলনে মুখোমুখি হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তাঁরা তাইওয়ান ইস্যু ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় সমাধান নিয়ে কথা বলবেন। বিশ্বনেতারা জলবায়ু সংকট, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা করবেন।