মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য

মিয়ানমারে হারানো শহর পুনর্দখলে ব্যাপক হামলা জান্তার

চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ কিন সান কিইয়াত ফটক। কয়েক দিন আগে সেখানে অন্তত ১২০টি পণ্যবাহী ট্রাক জ্বালিয়ে দেয় বিদ্রোহীরা
ফাইল ছবি : রয়টার্স

জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) নিয়ন্ত্রণ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পাউকতাও শহরকে মুক্ত করতে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে জান্তা সরকার। কামানের গোলার পাশাপাশি যুদ্ধবিমান থেকেও হামলা চালানো হচ্ছে।

আজ বুধবার আরাকান আর্মির যোদ্ধারা ও স্থানীয় বাসিন্দারা এ তথ্য জানান।

১৫ নভেম্বর ২০ হাজার বাসিন্দার এই শহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আরাকান আর্মি। রাজধানী সিত্তের কাছেই গভীর সমুদ্রবন্দরের কাছে শহরটি।

গত মাস থেকে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা চীন সীমান্তে মিয়ানমারের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার (সীমান্ত ফটক) নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, যা জান্তা সরকারে জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। এর ফলে চীনের সঙ্গে ওই পথ দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি রাজ্যের ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

এই অবস্থায় রাখাইন রাজ্যের সিত্তে থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের শহর পাউকতা এখন অন্যতম যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শহরের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক লড়াই চলছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

নিরাপত্তার খাতিরে নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যক্তি এএফপিকে বলেন, পাউকতা শহরে জান্তারা অবিরাম ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কাছেই একটি গ্রামে আশ্রয় নেওয়া এক বাসিন্দা বলেন, আজ একটি যুদ্ধবিমান থেকে দুটি বোমা ফেলা হয়েছে। সেখানে এখনো আগুন জ্বলছে।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাউকতাতে লড়াই চলছে। সিত্তের এক বাসিন্দা বলেন, সিত্তের চারপাশের ঘাঁটি থেকে পাউকতায় গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে আরেক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, সিত্তে থেকে প্রতিদিন দিনরাত অন্যান্য শহরেও গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। আরেকজন বাসিন্দা বলেন, ‘গোলাগুলির শব্দে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না।’

আরাকান আর্মির টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি ফুটেজে দেখা যায়, পাউকতা থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে। সঙ্গে বন্দুকের গুলির শব্দ।

সংগঠনটি বলছে, তারা আটকে পড়া সাধারণ মানুষদের এখনো ‘উদ্ধার’ করছে।

জান্তার মুখপাত্র জ মিন গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, সামরিক বাহিনীর লড়াই করার কথা স্বীকার করেছে। তবে বিস্তারিত জানায়নি।

আরাকান আর্মি অনেক বছর ধরে রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে থেমে থেমে লড়াই করে যাচ্ছে।

গত মাসে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) সশস্ত্র যোদ্ধাদের সঙ্গে এএ যোগ দিয়ে চীনের সীমান্তবর্তী শান রাজ্যে হামলা চালায়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণের পর মিয়ানমারের জান্তা এখন বেশ কঠিন সময় পার করছে।

জাতিসংঘের হিসাবে গত ২৭ অক্টোবর থেকে বিদ্রোহীদের শুরু হওয়া লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত শিশুসহ প্রায় ২০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।