আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজনের পরিকল্পনা

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে
ছবি: রয়টার্স

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজনের পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার।

২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এই তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে অনুষ্ঠানের খরচাপাতি কোন খাত থেকে মেটানো হবে, আবের জন্য রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন কতটা বৈধ হবে, এসব প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক থাকায় আয়োজনের তারিখ ও স্থান এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

আবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় সরকারি অর্থে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন নিয়ে কিছুটা বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে আয়োজকদের। সমালোচকেরা বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনের সুযোগ সীমিত।

জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার পাশাপাশি তাঁর সরকার মনে করছে, আবের অবদানের কথা স্মরণে রেখে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনের বাধা দূর করা সম্ভব।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার স্থান হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে টোকিওর কেন্দ্রস্থলের কুদান এলাকার নিপ্পন বুদোকান আরেনা।

আবের পছন্দের একটি জায়গা ইয়াসুকুনি মন্দির। এই মন্দির থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত নিপ্পন বুদোকান আরেনা। এখানে প্রতি বছরের ১৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানিদের স্মরণে স্মারক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি এখানে কনসার্ট হয়। ইনডোর কিছু খেলাধুলাও হয়।

জাপানে শেষবার রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইয়োশিদার জন্য এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জাপানের কঠিন সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার হাল ধরেছিলেন শিগেরু ইয়োশিদা। জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তী পুনরুদ্ধারে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর প্রবর্তিত ‘ইয়োশিদা ডকট্রিন’ বা ইয়োশিদা তত্ত্বকে জাপানের যুদ্ধোত্তর অগ্রযাত্রার ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়। তিনি তাঁর তত্ত্বে জাপানের যুদ্ধ পরিহারের সাংবিধানিক শর্ত মেনে সমর-ব্যয়ের চিন্তা বাদ দেন। তার পরিবর্তে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে মনোনিবেশ করাকে দেশের জন্য জুতসই অবস্থান হিসেবে যুক্তি দেখান।

আবের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনের পরিকল্পনাটি নিয়ে জাপানের জনমত দ্বিধাবিভক্ত।

সমালোচকেরা বলছেন, বিশেষ করে আবের অর্থনৈতিক নীতিমালা ‘আবেনোমিক্স’ সংকট উত্তরণে তেমন কোনো অবদান রাখেনি। তিনি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছেন। নানা কারণে তিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলেন না।

প্রায় আট বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিলেন আবে। তাঁর শাসনামলে বেশ কয়েকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এই কেলেঙ্কারিগুলো আংশিকভাবে হলেও নাগরিকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

আবেকে হত্যার ঘটনায় আটক সন্দেহভাজন ব্যক্তি দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইউনিফিকেশন চার্চের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পুলিশের কাছে উপস্থাপন করেছেন। এ নিয়ে জাপানের সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে।

সন্দেহভাজন হত্যাকারী তেৎসুইয়া ইয়ামাগামি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে আবে ও তাঁর (ইয়ামাগামি) পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ইউনিফিকেশন চার্চের তহবিলে বড় অঙ্কের চাঁদা দিতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে দেউলিয়া হতে হয়েছে। ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে আবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় বদলা নিতেই তাঁকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যাথলিক ধর্মযাজক রেভারেন্ড সুন মিউং মুন কোরিয়া যুদ্ধের পর ১৯৫৪ সালে ইউনিফিকেশন চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকেই কট্টর কমিউনিস্টবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত এই ধর্মীয় গোষ্ঠী।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই ধর্মীয় গোষ্ঠী দ্রুত প্রসার লাভ করে। এই সুযোগে মুন অনুসারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে থাকেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে বিত্তবান এক ব্যক্তিতে পরিণত হন।

আবের পিতামহ নোবুসুকে কিশি জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দেশে বামপন্থীদের উত্থান ঠেকানোর উদ্যোগ নেন। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি মুনকে জাপানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

গত শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক থেকে ইউনিফিকেশন চার্চ জাপানে ঘাঁটি গড়ে তোলে। জাপানিদের মধ্যে অনেকে নিজেদের যাবতীয় সঞ্চয় এই ধর্মগুরুকে দিতে থাকে। এ কারণে ইউনিফিকেশন চার্চ খুবই সম্পদশালী এক সংগঠনে পরিণত হয়। বলা হয়, জাপানে এখন তাদের সদস্যসংখ্যা প্রায় ছয় লাখ।

ইউনিফিকেশন চার্চের একটি সহযোগী সংগঠন ‘ফ্যামিলি ফেডারেশন ফর ওয়ার্ল্ড পিস অ্যান্ড ইউনিফিকেশন’। আবে এই সংগঠনের কয়েকটি অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেই সূত্রে সংগঠনের সঙ্গে তাঁর পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল বলে মনে করা হয়। ইয়ামাগামিও তেমনটা ধরে নিয়ে আবেকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।