‘পকেটে মাত্র ১৫ লিরা, তাতে কী, আমার এখন হারানোর কিছু নেই’

তুরস্কের আদানা শহরে উদ্ধারকারী সদস্যরা কাজ করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন এক নারী
ছবি: এএফপি

তুরস্কের ইসকেনদেরান অঞ্চলের বাসিন্দা সেরিজান আগবাস। তাঁর বয়সটা কম নয়, ৬১ বছর। এ বয়সে এসে মহাবিপত্তিতে পড়েছেন তিনি। কারণটা গত সোমবারের ভূমিকম্প। তিনি যে ভবনে বসবাস করতেন, সেটি যদিও কম্পনে ধসে পড়েনি, তবে থাকার জন্য আর নিরাপদ নয়। ফলে গত কয়েক দিন সেরিজানকে ঘুমাতে হয়েছে কাছের একটি স্কুলের বাগানে থাকা একটি চেয়ারে।

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেরিজানের বাসার কাছেই একটি ভবন ধসে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভবনটি চাপা পড়ে অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিকম্পের পর থেকে যাঁরা উদ্ধারকাজে নেমেছেন, তাঁদের খাবার এবং শীতের মধ্যে একটু উষ্ণতার জন্য আগুন দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন সেরিজান।

অন্যের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেও সেরিজানের কাছে তেমন কিছুই নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের যন্ত্রণার শেষ নেই। আমার পকেটে মাত্র ১৫ লিরা (তুরস্কের মুদ্রা) রয়েছে। তাতে কী, আমার এখন আর হারানোর মতো কিছু নেই। তাই আমি ভয় পাচ্ছি না।’

শুধু সেরিজানই নন, ভূমিকম্পের জেরে এমন দুদর্শায় পড়েছেন তুরস্ক ও সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষ। দেখা দিয়েছে খাবারসহ জরুরি নানা পণ্যের সংকট। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকাগুলোতে আট লাখের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের সংকটে রয়েছেন। বিপত্তি আরও বাড়িয়েছে তীব্র ঠান্ডা। এতে ভূমিকম্পের কবল থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা যেমন কষ্টে রয়েছেন, তেমনই বাধা পড়ছে উদ্ধারকাজে।

এরই মধ্যে নানা ধরনের সহায়তা নিয়ে তুরস্কের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ। উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারীরা। তবে সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো জাতিসংঘ সহায়তা পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস।

এক টুইটবার্তায় মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ব্যর্থ হয়েছি। এ মুহূর্তে তারা নিজেদের পরিত্যক্ত বলে মনে করছে। তারা যে সহায়তার আশা করছে, তা এখনো সেখানে পৌঁছায়নি। আমার দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই ব্যর্থতা তাড়াতাড়ি শুধরে নেওয়ার। এটার ওপরেই আমি এখন জোর দিচ্ছি।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভূমিকম্পের ষষ্ঠ দিন পেরোনের পর তুরস্ক ও সিরিয়ার মৃত্যু ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে মারা গেছেন ২৪ হাজার ৬১৭ জন। আর সিরিয়ায় সাড়ে চার হাজার। সময় গড়ানোর সঙ্গে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। মৃত্যুর বিষয়ে মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, মোট সংখ্যাটা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হবে।