বায়ুদূষণে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানে অকালে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ২০ থেকে ৫০ লাখ
বায়ুদূষণে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানে অকালে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ২০ থেকে ৫০ লাখ

গবেষণা

বায়ুদূষণে বিশ্বে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু

বায়ুদূষণের কারণে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন গ্যাস নির্গমন আর দাবানলের মতো অন্যান্য উৎস এ দূষণের কারণ। সোমবার সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি অকাল মৃত্যু হয়েছে এশিয়ায়। এই মহাদেশে নয় কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছে যাদের বেশির ভাগই চীন ও ভারতের। এ ছাড়া পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানে অকালে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ২০ থেকে ৫০ লাখ।

সিঙ্গাপুরের নানিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনটিইউ) এক গবেষণায় বায়ুদূষণের ভয়াবহতার এ চিত্র উঠে আসে। গবেষণাটি এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

গবেষকেরা বলেছেন, ‘এল নিনো’ এবং ‘দ্য ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোল’-এর মতো আবহাওয়া-সংশ্লিষ্ট বিষয় বাতাসে দূষণের উপাদানগুলোর ঘনত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে এগুলোর প্রভাবকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে।

বাতাসে ঘুরে বেড়ানো পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ বা পিএম ২.৫ ক্ষুদ্র কণার নিশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করাটা বেশ ক্ষতিকর। কারণ, এগুলো রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করার মতো যথেষ্ট ক্ষুদ্র। গাড়ি ও শিল্প-কলকারখানার গ্যাস নিঃসরণের পাশাপাশি দাবানল ও ধুলোঝড়ের মতো প্রাকৃতিক উৎস থেকেও পিএম ২.৫ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ বা প্রতিরোধ করা যেত এমন রোগ বা পরিস্থিতিতে পড়ে মানুষ গড় আয়ুর চেয়ে কম বয়সে মারা যাচ্ছে। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ ও ফুসফুসের রোগ ও ক্যানসার। আবহাওয়ার ধরনের কারণে এ ধরনের মৃত্যু ১৪ শতাংশ বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়।

বায়ুমান ও জলবায়ু নিয়ে এখন পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এ গবেষণায় সবচেয়ে বিস্তৃত আকারে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। মানবস্বাস্থ্যে পিএম ২.৫ এর প্রভাব কতটা সেটার একটি বড় চিত্র তুলে ধরতে গবেষণাটিতে ৪০ বছরের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়।

গবেষণা দলের প্রধান এনটিইউর এশিয়ান স্কুল অব দ্য এনভায়রনমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক স্টিভ ইম বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ুর ধরনে পরিবর্তন বায়ুদূষণকে আরও মারাত্মক করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এল নিনোর মতো জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা ঘটলে দূষণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এর মানে হলো, পিএম ২.৫ দূষণে আরও বেশি মানুষ অকালে মারা যেতে পারে।’

এই গবেষকের আহ্বান, বিশ্ববাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বায়ুদূষণ মোকাবিলা করতে হলে এসব বিষয় বোঝা দরকার। এ পরিস্থিতি সে বিষয়ের ওপরই জোর দিচ্ছে।

এনটিইউর গবেষকেরা পৃথিবীর বায়ুস্তরে পিএম-এর মাত্রা জানতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেছে।

অন্যদিকে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আবহাওয়ার ধরনের তথ্য নেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে।

গবেষক দলের প্রধান ইম বলেন, এই গবেষণায় বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে শুধু সাধারণ আবহাওয়ার ধরনের প্রভাবকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্য গবেষণায় জলবায়ুর প্রভাবের বিষয়টি দেখা হবে।

এনটিইউর এই গবেষণায় হংকং, যুক্তরাজ্য ও চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাও অংশ নেন।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, দাবানল ও যানবাহনের নির্গত গ্যাসসহ অন্যান্য কারণে সৃষ্ট বাহ্যিক পরিবেশে বায়ুদূষণ এবং গার্হস্থ্য বায়ুদূষণের সমন্বিত প্রভাবে বিশ্বে প্রতি বছর ৬৭ লাখ মানুষ অকালে মারা যায়।