ঘর থেকে বের হওয়ার আগে বাবাকে বলে গিয়েছিলেন, পোখারা থেকে ফিরে মাঘী সংক্রান্তির উৎসবে যোগ দেবেন। তবে সে কথা আর রাখতে পারেননি নেপালের পোখারায় বিধ্বস্ত ইয়েতি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ওশিন আলে মাগার। ভয়ংকর ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।
পিটিআইয়ের এক খবরে জানা যায়, গত রোববার উৎসবের দিন সকালে মেয়ে ওশিনকে কাজে না যেতে বলেছিলেন বাবা ভারতের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোহন আলে মাগার। সেদিন দুটি ফ্লাইটে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল ওশিনের। বাবাকে তিনি কথা দিয়েছিলেন পোখারা থেকে ফিরে মাঘী সংক্রান্তি উৎসবে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করবেন।
ইয়েতি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটি ৭২ জন আরোহী নিয়ে পোখারায় সেতি নদীর তীরে বিধ্বস্ত হয়। এ পর্যন্ত ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার খবর যখন ওশিনের পরিবারের কাছে পৌঁছায়, তখন তারা মাঘী সংক্রান্তি উদ্যাপনের জন্য ঘর সাজাচ্ছিল। বাবা মোহন আলে মাগার সজল চোখে মনে করেন সেদিনের কথা। রিপাবলিকা পত্রিকাকে ফোনে সাক্ষাৎকারে মোহন সেদিনের কথা বলেন।
রিপাবলিকা পত্রিকার ওই খবর বলছে, দুই বছর ধরে ইয়েতি এয়ারলাইনসে কাজ করেন ওশিন। তাঁরা চিতওয়ান জেলার মাদি এলাকার বাসিন্দা। রাজধানী কাঠমান্ডুতে চাকরি শুরু করার পর ওশিন মা-বাবা ও ভাইবোনকে সেখানেই নিয়ে আসেন। ছয় মাস ধরে মেয়ের সঙ্গে মা-বাবা কাঠমান্ডুতেই রয়েছেন।
ওশিনের দুই বোন ও এক ভাই রয়েছে। চার ভাইবোনের মধ্যে ওশিন ছিলেন বড়। তাঁর ভাইয়ের বয়স মাত্র চার বছর। পড়াশোনার সুবিধার জন্য কাঠমান্ডুতে ভাইবোন ও মা-বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন ওশিন।
নেপালের গেইনডাকোটে অক্সফোর্ড কলেজে পড়াশোনা করেছেন ওশিন। কাঠমান্ডুতে সাহারা এয়ার হোস্টেস একাডেমি থেকে তিনি এয়ার হোস্টেস হিসেবে স্নাতক হয়েছেন।
পোখারায় দুই বছর আগে বিয়ে হয় ওশিনের। তাঁর স্বামী এখন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তাঁর বাবা মোহান ও মা শবনম আলে মাগার পোখারায় মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করতে পৌঁছেছেন।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব নেপাল (সিএএন) বলছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছাড়ার পর পোখারায় পুরোনো বিমানবন্দর ও নতুন বিমানবন্দরের মধ্যে সেতি নদীর তীরে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।
উড়োজাহাজটিতে ৬৮ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু ছিলেন। বিশ্বের ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বতের মধ্যে নেপালে রয়েছে ৮টি। মাউন্ট এভারেস্টের অবস্থানও এখানে। দেশটিতে বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।