চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে নামকামের অবস্থান
চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে নামকামের অবস্থান

মিয়ানমারের শান রাজ্যে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় ১১ জন নিহত

মিয়ানমারের শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় ১১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ জনের বেশি। জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) গতকাল শুক্রবার এএফপিকে এসব কথা জানিয়েছে।

২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মিয়ানমারের সেনা সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর লড়াই চলছে। অভিযোগ আছে, মিয়ানমারের সেনারা রক্তক্ষয়ী প্রতিশোধ নিচ্ছেন এবং বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে বিমান ও গোলা হামলা চালাচ্ছেন।

টিএনএলএর কর্মকর্তা এলওয়ে ইয়েও বলেন, স্থানীয় সময় শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে তারা নামকাম শহরের দুটি এলাকায় বোমা হামলা চালিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, হামলায় ১১ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন পাঁচজন পুরুষ, চারজন নারী ও দুটি শিশু। হামলায় স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চীনের ইউনান প্রদেশের সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে নামকামের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। গত বছর কয়েক সপ্তাহের লড়াই শেষে টিএনএলএর যোদ্ধারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে একজনকে বের করে আনা হচ্ছে। তাঁকে দেখে আহত বলে মনে হচ্ছে।

একটি ভিডিওতে কয়েকটি বিধ্বস্ত ভবন দেখা গেছে। এএফপির সংবাদকর্মীরা ভিডিও দেখে জায়গাটিকে নামকাম হিসেবে শনাক্ত করেছেন। এটি আগে অনলাইনে দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করেছেন তাঁরা।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে ১৩ জন আহত ব্যক্তিকে দেখেছেন।

এএফপিকে ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি, সন্ধ্যায় তাঁদের শেষকৃত্য হবে।’ নিরাপত্তার কারণে স্থানীয় ওই বাসিন্দা তাঁর নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ওই বাসিন্দা বলেন, আরও বিমান হামলা হওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে টিএনএলএ স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে। নিরাপত্তার কারণে স্থানীয় মানুষদের কেউ যদি শহর ছেড়ে যেতে চান, তবে তাঁদের সরে যেতে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে জান্তার মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি এএফপি।

গত বছর থেকে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ে চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন সেনারা।

সম্প্রতি জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোর বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছেন, তাঁরা যেন পাল্টা হামলার জন্য প্রস্তুত থাকেন। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে।

চলতি সপ্তাহে মিয়ানমার জান্তা টিএনএলএকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, টিএনএলএকে যারা সমর্থন করবে এবং যোগাযোগ রাখবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপর দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) বিরুদ্ধেও একই কথা প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, সংঘাতের কারণে ২৭ লাখের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।