কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা নাটকীয়তার শেষে জাপানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ভোট গ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বী সাংবিধানিক গণতন্ত্রী দলের প্রধান নোদা ইয়োশিহিদেকে ৮১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শিগেরু ইশিবা।
আজ সোমবার দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ভোট গ্রহণের পর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা নিম্নকক্ষে কেন্দ্রীভূত হয়। উচ্চকক্ষে প্রধান ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দল এলডিপি ও দলের কোয়ালিশন অংশীদার কোমেই পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ইশিবা সেখানে সহজেই জয়লাভ করেন। তবে জাপানের নিম্নকক্ষ নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করায় সরকার চালানোর জন্য প্রয়োজন হওয়া সহজ জয় সেখানে পাওয়া ইশিবার জন্য সহজ হয়নি।
২৭ অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনে এলডিপি নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন দলের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ৪৬৫ আসনবিশিষ্ট নিম্নকক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ক্ষমতাসীন জোটের প্রয়োজন ছিল ২৩৩টি ভোট নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে নির্বাচনের পর থেকে এলডিপি ২৮টি আসনে জয়লাভ করা ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর দ্য পিপল ডিপিপির সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা চালিয়ে গেলেও ডিপিপি শেষ পর্যন্ত ইশিবা কিংবা প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থী নোদা—কারও পক্ষেই ভোট দিতে রাজি না হয়ে দলের সভাপতি তামাকি ইয়োইচিরোকে নিজস্ব প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়। ডিপিপির এই সিদ্ধান্তকে জাপানের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নিজস্ব একটি স্বতন্ত্র বলয় তৈরি করে নেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
ইশিবাকে ভোট দিতে ডিপিপির অপারগতা শেষ পর্যন্ত নিম্নকক্ষে দুই দফায় ভোটদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। জাপানের সংসদীয় পদ্ধতির অনুসৃত নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দফার নির্বাচনে একক কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের অনুমোদন লাভে ব্যর্থ হলে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করা হয়।
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ইশিবা পেয়েছেন ২২১ ভোট, অর্থাৎ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ১২টি ভোট কম। অন্যদিকে, নোদাকে ভোট দিয়েছেন ১৬০ জন সংসদ সদস্য। ফলে ইশিবাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পথ তাঁর জন্য খুলে যায়।
তবে এলডিপি ও ক্ষমতাসীন জোট ২৩৩টি ভোট না পাওয়ায় ইশিবাকে এখন সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হচ্ছে, জাপানের রাজনীতিতে যা হচ্ছে বিরল ঘটনা। বিজয় সত্ত্বেও সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হওয়ায় আগামী দিনগুলো ইশিবার জন্য ঝামেলামুক্ত কোনো অবস্থাতেই হবে না।
গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিল সংসদে পাস করিয়ে নিতে হলে এলডিপিকে এখন বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ছাড় দিতে হবে। অন্যদিকে সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদগুলোতেও সিডিপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে হবে বলে সার্বিকভাবে জাপানের পার্লামেন্টে এলডিপির অবস্থানগত দুর্বলতা এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে ভোট গ্রহণে সিডিপির সভাপতি পরাজিত হলেও অনেকে অবশ্য এটাকে দলের জন্য পরোক্ষ বিজয় হিসেবে এ কারণে দেখছেন যে নীতিগত বিভিন্ন অবস্থান বাস্তবায়িত করতে ক্ষমতাসীনদের ওপর বলিষ্ঠ চাপ প্রয়োগে দল এখন সক্ষম হবে এবং এমনকি অন্য বিরোধী দলগুলোকে রাজি করাতে পারলে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটও বিরোধীরা হয়তো পাস করিয়ে নিতে পারবে। ফলে বিপদ এড়িয়ে যেতে হলে ইশিবাকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সে রকম অবস্থায় চার বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নিম্নকক্ষ ভেঙে দিয়ে নতুন একটি সাধারণ নির্বাচন ডাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়ার নয়।
তবে পার্লামেন্টের বিশেষ তিন দিনের অধিবেশন চলা অবস্থায় জাপানের একটি সাময়িকী ডিপিপিপ্রধান তামাকির পরকীয়া প্রেমের খবর ফাঁস করে দেওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন তিনি। পার্লামেন্ট অধিবেশনে এর কতটা প্রভাব পড়বে, তা এখনো পরিষ্কার না হলেও তামাকি যে হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের ‘মধুর ফাঁদে’ পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত, তা নিয়ে জাপানের সংবাদমাধ্যম এখন সোচ্চার।