হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী ৮ নেতাকে ধরিয়ে দিতে তথ্য দিলে পুরস্কার

বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। ২০১৯ সাল
ছবি: এএফপি

বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত বিশিষ্ট গণতন্ত্রপন্থী আট নেতাকে ধরিয়ে দিতে তথ্য চেয়ে পুরস্কার ঘোষণা করেছে হংকং পুলিশ। যিনি তথ্য দেবেন তাঁকে ১০ লাখ হংকং ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯১ হাজার (১ হংকং ডলার=১৩.৮০ টাকা) দেওয়া হবে। জাতীয় নিরাপত্তা অপরাধের অভিযোগে তাঁদের ধরতে চায় পুলিশ।

আসামি প্রত্যর্পণ আইনের প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ২০১৯ সালের পুরোটা সময় হংকং ছিল অস্থিতিশীল। সে আইনে চীন চাইলে সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিজ ভূখণ্ডে নিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারত। ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে আইনটি বাতিল করলেও চীন ২০২০ সালে তার আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে নতুন জাতীয় নিরাত্তা আইন চাপিয়ে দেয়। এরপরই ওই আট নেতা হংকং থেকে পালিয়ে যান।

জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান সুপারিনটেনডেন্ট স্টিভেন লি বলেন, তাঁরা গুরুতর অপরাধ করেছেন, যা নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক গণতন্ত্রপন্থী আইনপ্রণেতা নাথান ল কুন-চুং, টেদ হুই চি-ফুং এবং ডেনিস কোক উইং-হ্যাং এবং প্রবীণ ইউনিয়নবাদী মুং সিউত-তাট। অন্য চারজন হলেন ইলমার ইয়েন গং–ই, ফিন লু চো–দিক, আনা কোক ফুং-ই এবং কেভিন ইয়াম কিন-ফুং।

জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্নে এই আটজন বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও বিদ্রোহের প্ররোচনার অভিযোগ রয়েছে।

লি বলেন, তাঁরা হংকংয়ের স্বার্থে আঘাত হানতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে সুপারিশ করেছেন এবং হংকংয়ের কর্মকর্তাদের বিশেষ করে কয়েকজন বিচারক ও আইনজীবীকে ভয় দেখিয়েছেন।

লি আরও বলেন, বিদেশে থাকলে পুলিশে তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারবে না। কিন্তু তাই বলে পুলিশ বসে থাকবে না।

পালিয়ে যাওয়া আটজনকে ‘গ্রেপ্তারে ও বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ তৈরির জন্য’ তাঁদের মধ্যে একজনের তথ্য দিলেও এই পুরস্কার পাওয়া যাবে।

এই আইন অনুযায়ী হংকংয়ে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট মামলাগুলো দেখভাল করেন নির্দিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী ও বিচারকেরা। বেইজিং চাইলে কিছু মামলার বিচার মূল ভূখণ্ডে কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত বিচারব্যবস্থার অধীনেও নিতে পারে।

ম্যাপে চীন ও হংকং

যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে হংকং চীনের কাছে হস্তান্তরের ২৬তম বার্ষকী উদ্‌যাপনের দুই দিন পরই ধরিয়ে দেওয়ার এই তালিকা ঘোষণা করা হয়।

এ আইনের অধীনে হংকংয়ে ২৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৬০ জনের বেশি ব্যক্তি ও পাঁচটি কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই গণতন্ত্রপন্থী বিশিষ্ট রাজনীতিক, অ্যাকটিভিস্ট, শ্রম অধিকারকর্মী ও সাংবাদিক।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন ইয়াম, যিনি হংকংয়ে একসময় আইনজীবী ছিলেন এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি এএফপিকে বলেন, হংকংয়ের জন্য তাঁর দুঃখ হচ্ছে। হংকং কতটা নেমে গেছে, এতে এটাই প্রতিফলিত হচ্ছে।