মহাসড়কে বাসটির একটি টায়ার ফেটে যায়। এরপর বাসটি সড়ক বিভাজকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেলে এতে আগুন ধরে যায়
মহাসড়কে বাসটির একটি টায়ার ফেটে যায়। এরপর বাসটি সড়ক বিভাজকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেলে এতে আগুন ধরে যায়

থাইল্যান্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলের বাস, ২৩ জন নিহতের আশঙ্কা

থাইল্যান্ডে স্কুল থেকে সফরে যাওয়া একটি বাসে আজ মঙ্গলবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাসটিতে শিশু, শিক্ষকসহ ৪৪ আরোহী ছিলেন। এই অগ্নিকাণ্ড থেকে ২১ জন পালাতে পারলেও অন্যরা নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশটির ওথাই থানি প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের ওয়াত খাও ফরায়া শঙ্খরাম স্কুল থেকে শিশুদের নিয়ে তিনটি বাস ব্যাংককের উত্তরাঞ্চলে একটি বিজ্ঞান জাদুঘর দেখতে যাচ্ছিল। এই শিশুরা ছিল কিন্ডারগার্টেনের বয়সী থেকে ১৩-১৪ বছর বয়সী।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, আজ স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংককের উত্তরাঞ্চলে এক শহরতলিতে মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় বাসটির একটি টায়ার ফেটে যায়। এরপর বাসটি সড়ক বিভাজকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেলে এতে আগুন ধরে যায়।

দেশটির পরিবহনমন্ত্রী সুরিয়া জুয়াংরুংকিত বলেন, প্রাথমিক খবরে বলা হয়, বাসটিতে ৩৮ শিশু ও ৬ শিক্ষক ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল বলেন, আগুনের হাত থেকে ২১ জন বেরিয়ে আসতে পেরেছে। কিন্তু ২৩ জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আশঙ্কা করা হচ্ছে তারা মারা গেছে।

পুড়ে যাওয়া বাসটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্কুলের এক শিক্ষার্থী। সে এই সফরে আরেকটি বাসে ছিল। পুড়ে যাওয়া বাসের দৃশ্য যাতে সে না দেখে তাই তার চোখ হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছেন তার স্বজন

এ ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা হতাহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ওথাই থানি থেকে শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাসে আগুন লেগেছে বলে আমি জানতে পেরেছি...এর ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। একজন মা হিসেবে আমি হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি।’

দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও স্কুলের ফেসবুক পেজে সফরকারী এই দলের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি থাইল্যান্ডের প্রাচীন রাজধানী আয়ুথায়াতে করা। সেখানে সবার পরনে ছিল কমলা রঙের উর্দি।

বাস থেকে বেঁচে গেলেও অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। তাদের দেখতে পাথুম থানিতে পাত্রংসিত হাসপাতাল যান দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা (মাঝে)

উদ্ধারকারী দলের প্রধান পিয়ালাক থিংকিয়েউ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধার করা মরদেহগুলোর মধ্যে খুব অল্প বয়সের কয়েকজন রয়েছে। বাসের সামনের দিকে প্রথমে আগুন লাগে। শিশুরা আগুন থেকে বাঁচার জন্য বাসের পেছন দিকে চলে এসেছিল। কারণ, তাদের মরদেহগুলো সেখান থেকে উদ্ধার হয়। তবে মরদেহগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে শনাক্ত করা কঠিন। আর যেসব শিশু আগুন থেকে বাঁচতে পেরেছে, তাদের মুখমণ্ডল, মুখ ও চোখ পুড়ে গেছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উদ্ধারকর্মীরা বলেন, বাসের আগুন নেভানো গেলেও মরদেহ উদ্ধারের জন্য তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ, বাসটি এতটায় উত্তপ্ত ছিল যে ভেতরে ঢোকা যাচ্ছিল না। তাই বাসটিকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য সময় দিতে হয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, পরিবহনমন্ত্রী বলেন, বাসটি চলছিল সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি), যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রণালয় অবশ্যই একটি পদক্ষেপ নেবে... সম্ভব হলে যাত্রীবাহী বাসগুলোয় এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ জ্বালানি (সিএনজি) ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।’

বাসটি চলছিল সিএনজিতে। বাসের সামনের দিকে প্রথমে আগুন লাগে। পরে পুরো বাসে আগুন ধরে যায়

বিশ্বে যেসব দেশে সড়কের নিরাপত্তা সবচেয়ে বাজে, সেসব দেশের মধ্যে থাইল্যান্ড একটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর দেশটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। অর্থাৎ প্রতিদিনের হিসাবে এ সংখ্যা ৫০ জনের বেশি।