ইরানে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে আলোচিত ও সমালোচিত নীতি পুলিশ বিলুপ্ত করার কথা জানা গিয়েছিল। তবে এই বিষয় নিয়ে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে। ইরানের এক সরকারি কর্মকর্তার বরাতে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বলছে, নীতি পুলিশ বিলুপ্ত হচ্ছে। কিন্তু ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, নীতি পুলিশ বিলুপ্ত হচ্ছে, এমন কথা কেউ বলেননি। খবর রয়টার্স ও সিএনএনের
দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরিকে উদ্ধৃত করে গত রোববার বিভিন্ন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে নীতি পুলিশ বিলুপ্তির খবর প্রকাশিত হয়। সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গত বৃহস্পতিবার তেহরানে এক অনুষ্ঠানে মনতাজেরি বলেছেন, ‘ইরানের বিচার বিভাগের সঙ্গে নীতি পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি বিলুপ্ত করা হচ্ছে।’
তবে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। বলা হয়েছে, দেশটির নীতি পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখে থাকে। এটি বিচার বিভাগ দেখে না।
আরবি ভাষার আল-আলম টেলিভিশন দাবি করেছে, বিদেশি সংবাদমাধ্যমে মনতাজেরির মন্তব্যে বিক্ষোভের মুখে নীতি পুলিশ বিলুপ্ত করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু তাঁর (মনতাজেরির) মন্তব্য থেকে বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা যায়। তাঁর মন্তব্য ছিল, নীতি পুলিশ সরাসরি বিচার বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ইরানের কোনো কর্মকর্তা এখনো বলেননি যে নীতি পুলিশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইরানের ‘নীতি পুলিশ’ মূলত ফারসি ‘গাতে-ই এরাদ’ বা ‘গাইডেনস প্যাট্রল’ নামে পরিচিত। তাদের কাজ হলো ইরানের কঠোর পোশাকবিধি অমান্যকারী ব্যক্তিদের আটক করে ব্যবস্থা নেওয়া। নীতি পুলিশ ইরানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত, যা ২০০৬ সালে কাজ শুরু করে। ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ঠিক করা ইসলামি নীতিনৈতিকতা মানুষ মানছে কি না, তা তারা নিশ্চিত করে।
নীতি পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে একটি করে ভ্যান আছে। এই ভ্যানে নীতি পুলিশের নারী ও পুরুষ উভয় সদস্যরা থাকেন। তাঁরা ব্যস্ত জনপরিসরে টহল দেন। কেউ যথাযথ আচরণ না করলে, যথাযথ পোশাক না পরলে তাঁরা তাঁদের ধরেন। পরে আটক ব্যক্তিদের সতর্ক করা, জরিমানা করা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়।
অনেক সময় নিয়ম লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের থানা বা সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত সেপ্টেম্বরে নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির। যথাযথভাবে হিজাব না পরায় মাসাকে আটক করেছিল নীতি পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তুমুল বিক্ষোভ। দাবি ওঠে হিজাব আইন বদলে ফেলার।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কয়েক মাসের বিক্ষোভে ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ৪০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৬ হাজার ৮০০ জনের বেশি। ইরান সরকারের ভাষ্যে, নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক। ইরানের অভিনেতা-অভিনেত্রী, ক্রীড়াবিদসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি ইতিমধ্যে বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন। বিক্ষোভের মুখে কঠোর হিজাব আইনে পরিবর্তন আনার আভাস দিয়েছে ইরান সরকার।