শ্রীলঙ্কার সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। তাঁকে সেখানে গ্রেপ্তারের আবেদন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক অধিকার সংগঠন দ্য ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি)। সংগঠনটি গোতাবায়ার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় তামিলদের দমনে জেনেভা কনভেনশনের গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।
সিঙ্গাপুরের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে করা আবেদনটির একটি কপি রয়টার্সের হাতে এসেছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০০৯ সালে তামিলদের দমনে জেনেভা কনভেনশনের তোয়াক্কা করেননি গোতাবায়া। ওই সময় তিনি শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। এই অপরাধের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অভিযোগটির খসড়া প্রস্তুতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আইনজীবী আলেকজান্দ্রা লিলি ক্যাথার। জার্মানির বার্লিন থেকে তিনি টেলিফোনে রয়টার্সকে জানান, অভিযোগের সঙ্গে গোতাবায়ার অপরাধের বিষয়ে নানা তথ্যপ্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে। গোতাবায়া এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। দেশটির নিজস্ব আইনে তাঁর বিচারের সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত গোতাবায়ার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে এর আগে তিনি একই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, গত শনিবার তারা আইটিজেপির পক্ষ থেকে একটি চিঠি পেয়েছে। এ বিষয়ে এখনই তাঁদের বলার মতো কিছু নেই।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোতাবায়া ব্যক্তিগত সফরের অংশ হিসেবে সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করছেন। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেননি।
স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির রাজনীতিতেও। তুমুল জনরোষের মুখে ১২ জুলাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া মালদ্বীপে পালিয়ে যান। ১৩ জুলাই তিনি সেখান থেকে যান সিঙ্গাপুরে এবং সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান গোতাবায়া। এরপর পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে জিতে গোতাবায়ার স্থলাভিষিক্ত হন রনিল বিক্রমাসিংহে।
গোতাবায়ার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রভাবশালী রাজাপক্ষে পরিবারের কার্যত পতন ঘটেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকদের অনেকেই। কেননা চলমান আন্দোলনের জেরে আগেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তাঁর বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিল আইটিজেপি। তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কূটনৈতিক দায়মুক্তির আওতায় এসব মামলা থেকে নিষ্কৃতি পান গোতাবায়া।