‘ভূমিকম্পে আমাদের সব শেষ, খাবার নেই, থাকার জায়গা নেই’

নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের অনেককে ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেছে বাড়িঘর। এতে নেপালের পশ্চিমাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকায় গৃহহীন হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের কনকনে ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বা অস্থায়ী তাঁবুতে রাত কাটাতে হচ্ছে।

গত শুক্রবার রাতে নেপালে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৫৭ জন নিহত এবং তিন শতাধিক মানুষ আহত হন। নেপালের জাতীয় ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বলেছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪। আর মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুসারে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাজারকোট ও পশ্চিম রুকুম জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় এখন গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের জন্য জরুরি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে উদ্ধারকারী দলগুলো বিবিসিকে বলেছে, গৃহহীন মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত তাঁবু নেই।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ও বোন হারানো এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা এখন এক বিপন্ন অবস্থায় বেঁচে আছি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। কোনো খাবার নেই, আশ্রয় নেই। আমার বোন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমাদের সহায়তা প্রয়োজন।’

ভূমিকম্পে সাত বছর বয়সী সন্তানকে হারিয়েছেন বালজিত মাহার। তিনি পার্বত্য জেলা জাজারকোটের চিউরি গ্রামের বাসিন্দা। বালজিত মাহার বিবিসিকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় ঘুম ভেঙে আমরা পরিবারের অপর ছয় সদস্য ঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে পারলেও তাকে বাঁচাতে পারিনি।’

ভূমিকম্পে বালজিতের মাটি ও পাথরে নির্মিত বাড়ির সামনের অংশ ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। সেখানকার ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে তিনি তাঁর সন্তানের মরদেহ বের করে আনেন।

বালজিত বিবিসিকে আরও বলেন, ‘আমার সব মালামাল আর কাপড়চোপড় ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। আমার আর কিছুই থাকল না।’

ভূমিকম্পে বাড়িঘরে ধস ও ফাটল ধরায় আতঙ্কে অনেককে খোলা জায়গায় রাত কাটাতে হয়। জাজারকোট, নেপাল, ৪ নভেম্বর

ভূমিকম্পে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আরেকজন বালজিত বিকে। রুকুম এলাকার এ বাসিন্দা গৃহহীন মানুষদের আশ্রয়ের জন্য সরকারি সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন।

বালজিত বিকে বলেন, ‘কোনো খাবার নেই, থাকার জন্য নেই কোনো আশ্রয়। লোকজন খোলা আকাশের নিচে থাকছে। ঠান্ডার মধ্যে সেখানে থাকতে হচ্ছে। সব বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।’

ভূমিকম্পে জাজারকোটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় নিহত মানুষদের গণসৎকারের প্রস্তুতি চলছে।

একদিকে ভূমিকম্পে প্রিয়জন হারানোর শোক বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা, অন্যদিকে তাঁরা আফটার শকের (ভূমিকম্পপরবর্তী কম্পন) আতঙ্কে আছেন।

জাজারকোট ও পশ্চিম রুকুমের বাসিন্দাদের বাড়িঘর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার নেপালে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর ২৫০টির বেশি আফটার শক অনুভূত হয়েছে। নেপালের জাতীয় ভূমিকম্পবিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এসব আফটার শকের মধ্যে ছয়টির মাত্রা চারের ওপরে ছিল।

নেপাল সরকার বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলো থেকে সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এক বছরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে।