অভিমত

পরস্পরকে নিয়ে যে বিপদে পাকিস্তান-আফগানিস্তান

পাকিস্তান হঠাৎ বিপুলসংখ্যক অবৈধ আফগান শরণার্থীকে বের করে দিচ্ছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী টিটিপিকে দুর্বল করতে পাকিস্তানের এই উদ্যোগ। কিন্তু লাখ লাখ শরণার্থীকে অনেকটা খালি হাতে আফগানিস্তানে ফিরতে হচ্ছে। তাঁদের ও সন্তানদের অনিশ্চিত অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে তাঁদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ বাড়ছে, তেমনি কাবুলের তালেবান সরকারের সঙ্গে ইসলামাবাদের দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

পাকিস্তান থেকে বহিষ্কৃত একটি আফগান শরণার্থী পরিবার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আফগানিস্তানের জালালাবাদের দিকে রওনা হয়েছে। ১২ নভেম্বর পাকিস্তানের তোরখাম সীমান্তে
ছবি: এএফপি

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সরকার এবং জনগণকে সব ঋতুতে সমানভাবে ঘনিষ্ঠ ভাবার চল আছে। বাস্তবতা আসলে সে রকম নয়। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান জাতিসংঘভুক্ত হতে গেলে মুসলমানপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে কেবল আফগানিস্তান আপত্তি তুলেছিল। সম্পর্কের প্রথম দিককার সেই তিক্ততা মেটাতে ১৯৫৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে কাবুল যেতে হয়েছিল। ঐতিহাসিক সেই রেষারেষি বিভিন্ন সময় নতুন নতুন উপলক্ষ নিয়ে হাজির হয়। পাকিস্তান তাদের ভূমি থেকে আফগান শরণার্থীদের তাড়াতে শুরু করায় ইদানীং টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।

ডুরান্ড লাইনের দুই দিকে আবার মানবিক বিপর্যয়

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত ‘ডুরান্ড লাইন’ লম্বায় ১ হাজার ৬৫০ মাইলেরও বেশি। ব্রিটিশরাজের তৈরি এই রেখা। একই সংস্কৃতির মানুষ রাজনীতির কারণে সীমান্তের দুই দিকে পড়ে গেছেন। একসময় এমন ছিল, তীব্র শীতের মৌসুমে আফগানরা আজকের পাকিস্তান-ভারতভুক্ত অঞ্চলে চলে আসতেন। বরফ পড়া বন্ধ হলে আবার আফগানিস্তান ফিরে যেতেন। এ ছাড়া বিপদে-আপদে এক দিকের মানুষ অন্য দিকে যেতেন। সেই হিসেবেই রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের সময় অনেক আফগান পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাকিস্তান এখন এই মানুষদের ফেরত পাঠাতে মরিয়া বিশেষ করে যাঁদের কাছে আসা ও থাকার কোনো নথিপত্র নেই। অর্থাৎ যাঁরা ‘অবৈধ’।

অন্যদিকে নথিভুক্তদেরও নতুন বছর থেকে পাকিস্তানে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। ইতিমধ্যে প্রায় তিন লাখ আফগানকে সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের প্রশাসকেরা উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও করছেন। পাকিস্তান-আফগান মহাসড়কগুলোয় এখন শুধুই ট্রাকের দীর্ঘ সারি। হাজার হাজার পরিবার প্রতিদিন সামান্য সহায়-সম্বল নিয়ে আফগানিস্তানে ফিরছে। তবে কারও মনে পিতৃভূমিতে ফেরার আনন্দ নেই। কারণ, তাদের চরম অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে পাকিস্তান। এদের অনেকে তিন-চার দশক আগে পাকিস্তানে এসে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন আফগানিস্তানে ফিরে তাদের তাঁবুতেই ঠাঁই হবে।

প্রশ্ন উঠেছে, এ সময় পাকিস্তান কেন এই শরণার্থীদের তাড়াচ্ছে? এ উদ্যোগের ফল কী দাঁড়াবে?

আফগান শিশুদের ব্যাপারে উদাসীন

গত চার-পাঁচ দশক আফগানিস্তানে যত অস্থিরতা হয়েছে, তার সঙ্গে পাকিস্তানের গভীর যোগ ছিল। ন্যাটোর ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’-এর সঙ্গী হয়ে পাকিস্তান আফগান অস্থিরতা থেকে আর্থিকভাবে অনেক ফায়দা তুলেছে। বিনিময়ে কমবেশি ৪০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ শরণার্থীর কোনো কাগজপত্র নেই। একসময় ‘শরণার্থী প্রকল্প’ পাকিস্তানের জন্য লাভজনক হলেও এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক তহবিলের অনেকখানি চলে গেছে ইউক্রেনের দিকে। বাকিটা যাবে গাজা কিংবা বার্মায়। তা ছাড়া পাকিস্তান ভাবছে, এই শরণার্থীরা তাদের জন্য নিরাপত্তা-সংকটও বাড়াচ্ছে।

১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে রুশ অভিযান থেকে পাকিস্তানে শরণার্থী আসা শুরু। গত দুই বছরে নতুন করে এসেছেন ছয় লাখ। বিশ্বের কম দেশে এখন এত শরণার্থী আছে। ফলে এদিক থেকে পাকিস্তানের চাওয়া যৌক্তিক যে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ। এখন শরণার্থীদের ধীরে ধীরে সে দেশে ফিরে যাওয়া দরকার। অন্তত আফগান সরকারের এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তবে সমস্যা হলো, হঠাৎ এত শরণার্থীর ফেরত দিতে চাওয়াটা অস্বাভাবিক।

অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত আফগানিস্তানে কোথায় ফিরবেন এই শরণার্থীরা? খাবেন কী? চলবেন কীভাবে? শরণার্থী পরিবারের আফগান নারীরা ফিরতে বিশেষভাবে অনিচ্ছুক। হাজার হাজার শিশু তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষাজীবন থেকেও ছিটকে পড়েছে। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে চোখ দিলে যে কেউ ঢাকা থেকেও টের পাবেন, গাজার শিশুদের নিয়ে দেশটি কত উদ্বিগ্ন। ঠিক একই দেশ থেকেই আফগান শিশু-কিশোরেরা ফিরছে নির্দয়তার অভিজ্ঞতা নিয়ে।

পাকিস্তানের আফগান শরণার্থীদের বড় অংশেরই জন্ম বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে। অনেক শরণার্থী পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছেন বা ব্যবসা করছেন। পাকিস্তানকেই তাঁরা জন্মভূমি হিসেবে জানেন। সেই তুলনায় আফগানিস্তান অনেকের কাছে অজানা-অচেনা এক ‘প্রতিবেশী’। কিন্তু পারিবারিকভাবে তাঁদের গায়ে লেগে আছে আফগান পরিচয়। এই তকমা তাঁদের দুর্ভাগ্যের নতুন অধ্যায়ে টেনে নিচ্ছে।

অচিন্তনীয় এক আর্থিক ট্র্যাজেডি

পাকিস্তানে এখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চলছে। এ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বালুচ জাতিসত্তার সরফরাজ বুগতি। বালুচরা সাধারণভাবে আফগান শরণার্থীদের পছন্দ করে না। তবে সরফরাজ বুগতির বিরোধিতা ব্যক্তিগত নয়। তাঁর ভাষ্যমতে, আফগান শরণার্থীদের মাধ্যমে পাকিস্তানে মাদক ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিস্তার ঘটছে। বিশেষ করে টিটিপি (তেহরিক-এ-তালিবান পাকিস্তান) জোটের সশস্ত্র তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত নাস্তানাবুদ হচ্ছে। এ অবস্থাকে কিছুটা সহনীয় করতে শরণার্থীদের বের করে টিটিপির জনবলের সরবরাহ লাইনে আঘাত হানতে চায় ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের জন্য একটা ‘সুবিধা’র দিকÑহচ্ছে, তারা শরণার্থীবিষয়ক জেনেভা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। ফলে নিজস্ব আইনে শরণার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে তারা। অনেক শরণার্থী দশকের পর দশক পাকিস্তানে থেকে যে সম্পদ অর্জন করেছেন, বিতাড়িত হওয়ার সময় তাঁরা সেই অর্থসম্পদ থেকে মাত্র ৫০ হাজার রুপি নিতে পারছেন। অনেক পরিবার দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য সম্পদ পানির ধরে বিক্রি করে চোখের জলে আফগানিস্তানে যাচ্ছে। পাকিস্তানজুড়ে এ মুহূর্তে সুনামির আদলে স্থানীয়দের হাতে আফগানদের সম্পদ স্থানান্তর হচ্ছে, যাকে একালের এক অচিন্তনীয় আর্থিক ট্র্যাজেডি বলা যায়।

দুই বছরে যে উচ্ছ্বাস থেমে গেছে

ন্যাটোকে তাড়ানো আজকের আফগান সরকার দীর্ঘদিন ধরে বলছে, তারা দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়েছে। অর্থনীতির অবস্থাও ভালো। এমন দাবির পর নিজ শরণার্থীদের ফেরত না নেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। কিন্তু আফগান সরকার পাকিস্তানের চলতি ভূমিকা মেনে নিতে অনিচ্ছুক। তাঁরা বলছেন, পাকিস্তান শরণার্থীদের সঙ্গে ‘অমানবিক’ আচরণ করছে। এ মুহূর্তে যে পরিমাণ বিদেশি সহায়তা ও দেশজ সম্পদ তাঁদের আছে, তা দিয়ে এত মানুষের পুনর্বাসন সম্ভব নয়। তালেবান সরকারের এ দাবিতে যথেষ্ট সত্যতা আছে। কিন্তু সে সত্যের শক্তিতে ইসলামাবাদকে থামানো যাচ্ছে না।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান যখন কাবুলে ক্ষমতা দখল করে, তখন পাকিস্তানে ক্ষমতাসীনেরা বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল। পাকিস্তান ধরে নিয়েছিল, তার এই সীমান্তে পাহারার জন্য এখন থেকে আর বড় সামরিক বিনিয়োগ লাগবে না। কিন্তু ২৪ মাসের মাথায় সে হিসাব অনেকখানি পাল্টে গেছে। ডুরান্ড লাইনের দুই দিকে সামনের দিনে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

এককালের ‘মুজাহিদ’ এখন ‘সন্ত্রাসী’

পাকিস্তান এ মুহূর্তে হঠাৎ অবৈধ আফগানদের দেশ থেকে বের করে দিতে চাইছে, যার অন্যতম কারণ নিজ জমিনের সশস্ত্র তালেবানকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে তালেবান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পাকিস্তানে একই আদর্শের গোষ্ঠী টিটিপির হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৩০০ মানুষ মারা গেছে। কাবুলে নিজেদের সমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠার পর এমন একটা অবস্থা পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্রের জন্য বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। টিটিপিকে কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না। এখন পাকিস্তান সরকার নাগরিকদের বোঝাতে চাইছে, অবৈধ আফগানরাই হলো টিটিপির ‘সন্ত্রাস’-এর জ্বালানি।

আফগান শরণার্থীদের ৫০-৬০ শতাংশই থাকে আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে। এখানেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর টিটিপির হামলা বেশি হচ্ছে। ফলে এই দুইয়ের যোগসূত্র দেখানো কঠিন নয়। ২০২২ সালের জুন থেকে পরের ১২ মাসে এই প্রদেশে টিটিপি ৬৬৫ হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় কেবল পুলিশই মারা গেছে প্রায় ২০০ জন।

এই অঞ্চল অতীতে আফগান তালেবানের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। তাতে খোদ পাকিস্তান প্রশাসনের সায় ছিল। পাকিস্তানের কুলীনপল্লিতে কান পাতলে তখন স্লোগান শোনা যেত, ‘জিহাদ-ই-আফগানিস্তান, ডিফা-ই-পাকিস্তান’। অর্থাৎ পাকিস্তান সুরক্ষার শর্ত হলো আফগানিস্তানকে শত্রুমুক্ত করা। পাকিস্তানের সেই একই প্রশাসন পুরোনো সেই মুজাহিদদের এখন আফগান সমর্থনপুষ্ট ‘সন্ত্রাসী’ বলছে। এ যেন ফুটবলের মতো একই মানুষদের দুই গোলপোস্টের দিকে ছোড়া হচ্ছে।

আফগান সরকার অবশ্য টিটিপিকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করছে। তাদের দাবির সত্যতা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের যোগাযোগ বন্ধ করা দুরূহ।

একই আদর্শের আফগান ও পাকিস্তান তালেবান দুই বছর আগেও একই অঞ্চলে সংগঠিত ছিল। এখন পাকিস্তান চাইলেই সীমান্তের দুই দিকের তালেবান পারস্পরিক আদর্শ ও সহায়তার বন্ধন ছিন্ন করবে—এটা সহজ নয়। এ নিয়ে আফগান সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের চাওয়া-পাওয়ার সমন্বয় সম্ভব নয়। পারস্পরিক চাওয়া-পাওয়ার এই ব্যবধান থেকেই শরণার্থী ইস্যু সামনে এসেছে। অর্থাৎ দুই সরকারের মতদ্বৈধতার বলি হচ্ছেন শরণার্থীরা।

তবে আফগান সরকারকে চাপ দিতে গিয়ে শরণার্থীদের দুর্দশায় ফেলা পাকিস্তান সরকারের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। শরণার্থী পশতুদের পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে এখন যেভাবে হয়রানি হতে হচ্ছে, সে কাহিনি ডুরান্ড লাইনের ওপারে তীব্র অসন্তোষ তৈরি করছে। যাঁরা এত দিন পাকিস্তানের সৌজন্যে এ দেশে ছিলেন, সহায়-সম্পদ হারিয়ে তাঁরা বুকে বিপুল ক্ষোভ নিয়েই ফিরছেন।

আফগানদের নতুন ‘বন্ধু’ খোঁজার সময়

চলতি ঘটনাবলিতে আফগান সরকার পড়েছে ত্রিমুখী সমস্যায়। প্রথম সমস্যা, ফেরত শরণার্থীদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয় সমস্যা, আরও শরণার্থী আসা ঠেকাতে পাকিস্তানের দাবিমতো টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে গেলে তালেবানের নিজেদের মধ্যেই উপদলীয় সংঘাত বাধতে পারে। ২০২১ সালে কাবুল বিজয়ের পর নেতৃস্থানীয় অনেক তালেবান যোদ্ধার মনে আদর্শিক যুদ্ধটা পাকিস্তানেও ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা জেগে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে নিজ কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও আইএসকে নিয়ন্ত্রণ করা কাবুল সরকারের জন্য অসম্ভব। কিন্তু আফগান মাটি থেকে টিটিপিকে সহায়তা করার অর্থ পাকিস্তানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাও বটে। তাতে দুই দেশের মধ্যে সমস্যার তালিকা আরও লম্বা হবে।

স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানে পাকিস্তানের সহায়তা অনেকভাবে দরকার। দেশটির অন্য তিন সীমান্তে থাকা উজবেক, তাজিক ও হাজারা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পশতু তালেবানের ঘনিষ্ঠতা বেশি নয়। বরং একধরনের কৌশলগত শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখছে ওসব এলাকায়। চীন ও রাশিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একমাত্র ডুরান্ড লাইনের অপর দিকের মানুষের সঙ্গে আফগান পশতুদের মৈত্রী পুরোনো ও ঐতিহাসিক। এই সম্পর্ক তিক্ত হলে দীর্ঘ মেয়াদে কাবুলের ঝুঁকিই বেশি। পাকিস্তান সরকারের উদার সহযোগিতা ছাড়া তালেবানের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিসরে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠাও বেশ কষ্টসাধ্য।

আবার পাকিস্তানের সামনে আফগানিস্তান ক্রমে এমন এক জটিল সমস্যা হয়ে উঠছে, যার সমাধান কেবল শরণার্থী তাড়িয়ে আসবে না। টিটিপি যেভাবে ‘আফগান বিপ্লব’ পাকিস্তানে আনতে চাইছে, সেটা শরণার্থীদের ফেরত পাঠিয়ে মোকাবিলা করা কঠিন। এমনকি আত্মঘাতীও।

বিক্ষুব্ধ পশতু শরণার্থীরা আর্থিক সহায়তা পেলে আফগানিস্তানে ফিরে টিটিপিতেই যোগ দেবেন। তা ছাড়া উভয় দেশের সীমান্তের ভৌগোলিক ধরন এমন নয় যে পাকিস্তান চাইলেই আফগানিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবে। পাকিস্তান শরণার্থী তাড়ানোর পাশাপাশি আফগান সীমান্তের পুরোটা কাঁটাতারের বেড়া বসিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে। এই উদ্যোগেও পশতুরা ক্ষুব্ধ। এর বাইরেও আছে সমস্যা।

টিটিপি ও শরণার্থী ইস্যুতে কাবুল সরকারের সঙ্গে ইসলামাবাদের যত বেশি মতপার্থক্য হবে, আফগান সরকার তত বেশি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বহুমুখী করতে চাইবে। দ্রুতই তারা হাত বাড়াবে নয়াদিল্লির দিকেও। ভারতের বোধ হয় অপেক্ষার দিন শেষ হতে চলল।

  • আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক