নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত সেপ্টেম্বর থেকে চলা বিক্ষোভ দমনকে কেন্দ্র করে চাপের মুখে রয়েছে ইরান সরকার। এ ধারাবাহিকতায় এবার বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি ইরানকে বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রখ্যাত অধিকারকর্মী ও প্রকৌশলী ফরিদেহ মোরাদখানি। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ভাগনি। খবর রয়টার্স ও এএফপির।
২৩ নভেম্বর ইরানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ফরিদেহ মোরাদখানি। এরপর তাঁর একটি ভিডিও বিবৃতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। সংবাদ সংস্থা এইচআরএএনএ পরে সেটি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে মোরাদখানি বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘মুক্ত মানুষেরা, আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং আপনাদের সরকারকে একটি খুনি ও শিশু হত্যাকারী শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকতে বলুন।’
ইরান সরকার সম্পর্কে ফরিদেহ মোরাদখানি আরও বলেন, ‘তারা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। তারা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখা ছাড়া আর কিছুই জানে না।’
ফ্রান্সে বসবাস করেন ফরিদেহ মোরাদখানির ভাই মাহমুদ মোরাদখানি। তিনিও একজন অধিকারকর্মী। ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থার কট্টর সমালোচক তিনি। মাহমুদ তাঁর বোনের ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করেছেন। জানিয়েছেন, তাঁর বোন এখন পুলিশের হেফাজতে আছেন। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে এক দফা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ফরিদেহ মোরাদখানি। পরে জামিন পান তিনি। এখন আবার গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁকে তেহরানের এভিন কারাগারে রাখা হয়েছে।
ফরিদেহ মোরাদখানির এ বিবৃতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে ইরান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
ফরিদেহ মোরাদখানির বাবা আলি মোরাদখানি আরঙ্গেহ ধর্মীয় নেতা ছিলেন।
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বোনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তবে তিনি ইরানের ইসলামিক শাসনের বিরোধী ছিলেন। এ জন্য দীর্ঘদিন নিভৃতবাস করতে হয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি তেহরানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে এইচআরএএনএ জানিয়েছে, ইরানজুড়ে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে ৬৩ শিশুসহ ৪৫০ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে। হিজাব না পরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রকাশ্যে অংশ নেওয়ায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইরানের দুই খ্যাতিমান অভিনেত্রী হেনগামেহ গাজিয়ানি ও কাতাইয়ুন রিয়াহি। আজ সোমবার হেনগামেহ গাজিয়ানিকে আদালতের নির্দেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনা এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরান সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্জনের জন্য বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির খ্যাতিমান শিল্পী, সাহিত্যিক ও নির্মাতারা। ইরান সরকারের প্রতি চলমান বিক্ষোভ দমনের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তাঁদের। ইরানের ছয় হাজারের বেশি শিল্পী, সাহিত্যিক ও নির্মাতা এক যৌথ বিবৃতিতে চলমান বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।