গণ-আন্দোলনে গোতাবায়া রাজাপক্ষে ক্ষমতাচ্যুত হলেও আদতে পেছন থেকে রাজাপক্ষে পরিবারই সরকার চালাচ্ছে। রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল সেই দাবির কিছুই বাস্তবায়ন করেননি প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে। অর্থনীতির সাফল্য দেখিয়ে আবারও প্রেসিডেন্ট হতে চান তিনি। কিন্তু সেটা কতটা সম্ভব?
শ্রীলঙ্কা থেকে গত বছরের মাঝামাঝি শুধু আর্থিক দুর্দশা আর গণ–আন্দোলনের খবর আসছিল। কিন্তু এখন গণমাধ্যমে উঠে আসছে দেশটির ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ আর ‘প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরা’র গল্প। শ্রীলঙ্কার এসব গল্প সত্যি হলে লঙ্কার শাসকদের জাদুবিদ্যা বাংলাদেশেরও বিস্তারিত জানার দরকার আছে। প্রশ্ন হলো, শ্রীলঙ্কায় কি সত্যি সত্যি সুদিন আসছে? বেদনায় ভরা অতীত থেকে কতটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তারা?
পর্যটকের চোখ দিয়ে কোনো জনপদকে দেখলে সমস্যা থেকেই যায়। বগা লেক বা সাজেকে দু-এক রাত কাটিয়ে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামকে বোঝা সম্ভব নয়, তেমনি দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেন দেখে নেপালিভাষী গুর্খাদের পৃথক রাজ্যের দাবির পূর্বাপরও বোঝা কঠিন। শ্রীলঙ্কা নিয়েও পর্যটকসুলভ ভাষ্যগুলোয় বিভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। একনায়কশাসিত দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় তথ্য-উপাত্ত সব সময় নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা ভালো—বিশেষ করে যাঁরা ভবিষ্যতে বোকা বনতে চান না।
এত সব সতর্কবাণীর পরও আমরা শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ উপাত্তে ভরসা রাখলে দেখব, সে দেশে বর্তমান আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর আগের তিন মাসে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। তারও আগের তিন মাসে ছিল ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। ৯ মাসের এমন চিত্রে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র প্রবল কোনো ইঙ্গিত নেই। যে কেউ ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কা’র ওয়েবসাইটে গিয়ে এসব উপাত্ত দেখতে পারেন। সেখানে বেকারত্বের হিসাবের ঘরে গত বছরের তথ্যই রয়েছে—৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
তবে শ্রীলঙ্কায় ইতিবাচক ঘটনাও আছে। মূল্যস্ফীতির গতি গত বছরের তুলনায় কমেছে। মূল্যস্ফীতি এখন এক ডিজিটের ঘরে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২ সালের মে মাসে ছিল ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাইয়ে ছিল ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রুপিও কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। এখন ১ ডলার সমান ৩২৫ রুপি। গত বছর ‘দুর্যোগে’র দিনে ছিল ৩৫৫ রুপি।
অবশ্য মনে রাখতে হবে, ডলারের বিপরীতে রুপি ২০০ থেকে মূল্য হারাতে হারাতে ৩৫০ পার হয়েছিল। এখন ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে কেবল ৩২৫-এ এসেছে। অর্থাৎ পরিবর্তন অতি মৃদু। কিন্তু রনিলের আন্তর্জাতিক মিত্ররা একে তাঁর জাদু হিসেবে দেখাচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক নয়। সুষ্ঠু ভোটে অনির্বাচিত যেকোনো শাসক ও তাঁর বন্ধুরা এমন করেই বলে। এমন নয় যে শ্রীলঙ্কা রপ্তানি বাড়িয়ে অবস্থার উন্নতি করেছে। বরং গত বছরের চেয়েও রপ্তানি কম। ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৬৫২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ বছরের একই সময়ে সেটা ছিল ৫৮৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
এরপরও যে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ বেড়েছে, তার কারণ আইএমএফের কিছু সিদ্ধান্ত। ডলার ধরে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুনে এক হাজার কোটি ডলারের আমদানির বিপরীতে চলতি বছরের একই সময়ে আমদানি প্রায় ৮০০ কোটি ডলার। তবে পর্যটন থেকে আয় গত জুলাইয়ের চেয়ে তিন গুণ বেড়েছে। বিদেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো আয়ও বেড়েছে। শেষের দুই ঘটনা মূলত নাগরিকদের কিছু স্বস্তি দিচ্ছে। তবে সামাজিক সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এখনো কম। আইএমএফ সেখানে পাহারায় আছে।
শ্রীলঙ্কা এখন দুই জায়গা থেকে শাসিত হচ্ছে বলা যায়। রনিল বিক্রমাসিংহের পাশাপাশি আইএমএফও চালকের আসনে আছে। গত মার্চে মাত্র ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার দিয়ে আইএমএফ এই অধিকার পেয়েছে।
এই দুই ‘শাসক’ মিলে ‘আর্থিক শৃঙ্খলা’ আনতে যেসব তিক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে, সাধারণ মানুষের কাছে তার প্রতিক্রিয়া সুখকর নয়। আর্থিক শৃঙ্খলা আসার সংবাদগুলোর দুটি দিক আছে। অনেকটা রাবণ কাহিনির মতো। অনেকে জানেন, লঙ্কার উপকথায় রাবণ হলেন দারুণ এক সুশাসক। তাঁর নাম যে ‘দশানন’ সেটাও পাণ্ডিত্য বোঝাতেই। অন্যদিকে বাল্মীকির রামায়ণে রাবণ প্রতিহিংসাপরায়ণ স্বৈরশাসক, অশুভ প্রতীক। লঙ্কায় আইএমএফের ‘কীর্তি’কেও এ রকম দুইভাবে দেখার সুযোগ আছে। করপোরেট ব্যাংকারদের দৃষ্টিতে দেখলে সেটা এক রকম। আবার জাফনা ও ত্রিঙ্কোমালির তামিল বা দক্ষিণের গরিব সিংহলিদের চোখে সেটা ভিন্ন।
রনিল আইএমএফের পাশাপাশি শক্তিশালী কিছু দেশকে খুশি রাখতে পারছেন বলে লঙ্কা নিয়ে এখন নেতিবাচক সংবাদ পাওয়া যাবে কম। দেশটিতে যে ৩০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে খাদ্যসংকটে থাকে, সেটা ইতিবাচক সংবাদগুলোয় আপাতত যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তা ছাড়া প্রায় এক বছর ধরে অর্থনীতি সংকুচিত হতে থাকায় শিল্পে যেসব মানুষ কাজ হারিয়েছিল (প্রায় ৫ লাখ) এবং তার ফলে দারিদ্র্য পরিস্থিতির কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তা–ও গণমাধ্যমে আশা করা ঠিক হবে না। নাজলি আহমেদের লেখা বিশ্বব্যাংকের ‘শ্রীলঙ্কা ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০২৩’-এ রয়েছে, গত বছরের সংকটকালে শ্রীলঙ্কায় নগর দারিদ্র্য প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। তাতে দেশটিতে ধনী-গরিবের ব্যবধান আরও বেড়েছে। এ ব্যবধানের কোনো সুরাহা হয়নি।
আরেক দুশ্চিন্তার দিক, দেশটির ৪১ বিলিয়ন ডলার বিদেশি দেনা নতুন করে কবে-কীভাবে দিতে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়াও বাকি (আউটলুক, ৩ জুলাই ২০২৩)। সেপ্টেম্বরেই আইএমএফ এ নিয়ে লঙ্কার ঋণদাতাদের বিস্তারিত প্রতিশ্রুতি শুনতে চায়। এ বিষয়ে কলম্বোর দরকার ভারত ও চীনের দয়া। কিন্তু বিদেশি দয়া রাজনীতিমুক্ত হয় না। একই সঙ্গে চীন-ভারতকে সুখী করা দক্ষিণ এশিয়ার কোনো ছোট দেশের পক্ষে সহজও নয়। আইএমএফ থেকে প্রথম দফা ঋণ পেতে ভারত জামিনদার হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, দ্বিতীয় দফা ডলার পেতে আইএমএফ–কে চীন আশ্বস্ত করবে কি না? আগামী মাসে প্রেসিডেন্ট রনিল বেইজিং যাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তখন হয়তো এর উত্তর মিলবে।
শ্রীলঙ্কার গত বছরের গণ-আন্দোলন এবং অতীত গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে যাঁরা জানেন, তাঁরা বুঝবেন, ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকট বিশুদ্ধ কোনো অর্থনৈতিক ঘটনা ছিল না। এর কারণ ছিল রাজনৈতিক দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব। ফলে ‘সুদিন’ আনতে লঙ্কার দরকার কাঠামোগত রাজনৈতিক সংস্কার।
গত বছর জুলাইয়ে রনিল বিক্রমাসিংহে যে প্রেসিডেন্ট হন, সেটা জনভোটে নয়—ক্ষমতাচ্যুত রাজাপক্ষে পরিবারের ছদ্ম সমর্থনে। পার্লামেন্টে তাঁর দলের সংসদ সদস্য বলতে কেবল তিনি। রাজাপক্ষদের ‘পোদুজানা পেরামুনা’ বা পিপলস ফ্রন্টের সমর্থনে রনিলের টিকে আছেন। তবে লঙ্কায় দল ভাঙাভাঙির ঐতিহ্য আছে। তাকে কাজে লাগিয়ে রনিল এক বছরে নিজের চারপাশে একটা সমর্থক ভিত্তি তৈরি করে নিয়েছেন। অপেক্ষাকৃত চতুর এক রাজাপক্ষে হিসেবেই ভিন্ন চেহারায় দেশ চালাচ্ছেন তিনি। ফলে যা ঘটেনি, গত বছর আন্দোলনকারীরা যেসব রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন, তার কোনো ফয়সালা হয়নি।
আন্দোলনকারীরা তখন নির্বাচিত হওয়ার পরও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির জন্য সাংবিধানিক ব্যবস্থা চাইছিল। সে রকম কোনো সংস্কার না হওয়ায় শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির নমনীয় কিছু পরিসংখ্যান ছাড়া টেকসইভাবে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র মতো বড় আকারে আর কিছু ঘটেনি। অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য যেসব রাজনৈতিক সংস্কার দরকার আমলাতন্ত্র ও রনিল কেউ-ই সেটা চাইছে না বা করছে না।
শ্রীলঙ্কায় ‘আইএমএফ ট্র্যাকার’ নামে একটা ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আইএমএফের নির্দেশাবলির বাস্তবায়ন সম্পর্কে নজর রাখা হয়। যে কেউ তাতে [manthri.lk/imf_tracker] ঢুকে দেখতে পাবেন, সরকার এক বছরে আইএমএফের কাছে যেসব অঙ্গীকার করেছে, তার ৩৮ শতাংশ মাত্র পূরণ করেছে, যা পূরণ করা হয়নি তার মধ্যে আছে মার্চের মধ্যে কর-রাজস্বকে জিডিপির ২ দশমিক ১ ভাগ করা এবং জুনে সেটা ৪ দশমিক ৩ ভাগে উন্নীত করা।
এসব করতে গেলে যে পদক্ষেপ নিতে হতো তাতে জনজীবনে ভোগান্তি নিশ্চিতভাবে বাড়ত। তবে আইএমএফের সঙ্গে অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ব্যর্থতার পরও রনিল সরকার ওই সংস্থা থেকে দ্বিতীয় দফা ডলার পেতে পারে। কারণ, অর্থনীতিতে নয়া উদারনৈতিক নীতি অনুসরণ করায় আইএমএফের পেছনে থাকা আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিলকে বেশ পছন্দ করছে।
এ পছন্দের ওপর ভরসা করে তিনি আগামী বছর ‘জনগণের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট’ হতে চান। সেই চাওয়া পূরণে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন এ মাসে যখন শ্রীলঙ্কা নিয়ে বহির্বিশ্বের কিছু সংবাদমাধ্যম ‘সুসংবাদ’ দিচ্ছিল, ঠিক তখনই দেশের সংবাদমাধ্যমে ভিন্ন প্রসঙ্গে বোমা ফাটল।
গত ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের ‘চ্যানেল ফোর’ টেলিভিশন চ্যানেল শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও পর্যটনকেন্দ্রে বোমা হামলার বহুল আলোচিত ঘটনার প্রকৃত সত্য তুলে ধরে একটা তথ্যচিত্র প্রকাশ করে। তথ্যচিত্রে লঙ্কার তিনজন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা (একজন পরিচয় গোপন রেখে) জানান, ওই ঘটনার হোতাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ছিল।
২০১৯ সালের ওই ঘটনায় ২৬৯ জন মারা যান। তখন অভিযোগ তোলা হয়, ছয় আত্মঘাতী মুসলমান এই হামলার জন্য দায়ী। তাঁরা ‘তৌহিদ জামায়াত’ নামের সংগঠনের সদস্য। তাঁদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেটে’র যোগাযোগ আছে। তখন দেশটির মুসলমানদের ওপর দীর্ঘস্থায়ী ধরপাকড় শুরু হয়, হয়রানি করা হয় অনেককে।
এই ঘটনা সিংহলি দক্ষিণপন্থার রাজনৈতিক উত্থানে সুবিধা করে দেয়। এমনকি এটা ভারতেও মুসলমানবিরোধী রাজনীতিতে জ্বালানি জুগিয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় শাসকেরা বোমা হামলাকে রাজনৈতিক পণ্য বানিয়ে সামরিক আমলাতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। কয়েক মাস পর সমরবাদী রাজাপক্ষে ক্ষমতায় আসে। রাজাপক্ষেদের গড়া সামরিক আমলাতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট নির্বিঘ্নে এক বছর কাটালেন।
শ্রীলঙ্কার ক্যাথলিক চার্চ বরাবরই বোমা হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানালেও গত চার বছরে কোনো শাসক সেই দাবি পূরণ করেননি। এখন চ্যানেল ফোরের তথ্য বলছে, রাজাপক্ষদের সঙ্গে ‘তৌহিদ জামায়াতে’র আগেই যোগাযোগ ছিল। এই ‘যোগাযোগে’র কারণে সিংহলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সম্ভাব্য বোমা হামলার তথ্য জানলেও সেটা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়নি। পরেও প্রকৃত অপরাধীদের ধরেনি। অপরাধ প্রতিরোধের চেয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দা নিতে আগ্রহ ছিল।
তথ্যচিত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিস্তারিত বলেছেন, উদারনৈতিক বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের নির্মূল করতে কীভাবে রাজাপক্ষে পরিবারের সদস্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে (যাঁকে জনগণ ক্ষমতাচ্যুত করে) ‘ত্রিপলি প্লাটুন’ নামে একটা ‘কিলিং স্কোয়াড’ গঠন করেছিলেন। তথ্যচিত্রে বেরিয়ে আসে, ওই ত্রিপলি প্লাটুনের প্রধান পিল্লাইয়ান এখনকার প্রেসিডেন্ট রনিলের মন্ত্রিসভার সদস্য। সংগত কারণে এসব নিয়ে শ্রীলঙ্কাজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। দেশটি যে মোটেই নির্মম অতীতের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে সরে আসেনি, সেটা স্পষ্ট।
চ্যানেল ফোরের তথ্যচিত্র রনিলকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। তাঁকে এখন নতুন করে বোমা হামলার তদন্ত করাতে হবে। সেটা আবার তাঁর রাজনৈতিক অভিলাষে বাদ সাধতে পারে।
লঙ্কায় যে জাতিগত বিন্যাস, তাতে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হতে হলে কেবল হিন্দু তামিল ও মুসলমান তামিলদের ভোট পেলে হবে না। তাঁকে সিংহলি একাংশেরও ভোট পেতে হবে।
সিংহলি ভোটে রাজাপক্ষদের পক্ষে-বিপক্ষে দুটি ধারা আছে। বিপক্ষের সিংহলিরা রনিলকে পছন্দ করার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে ইস্টার বোমা হামলা নিয়ে নতুন তদন্ত যদি রাজাপক্ষদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আগামী বছর রনিল সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওই পরিবারের সমর্থন না–ও পেতে পারেন।
আবার চ্যানেল ফোরের তথ্যচিত্রের পরও বোমা হামলা ঘটনায় রাজাপক্ষে পরিবার নির্দোষ প্রমাণিত হলে সেটা মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করবে। রনিলকে তাই কেবল অর্থনৈতিক সুসংবাদকে পুঁজি করে ভোটে জেতা কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে আরেকটি গণ-আন্দোলনের আগপর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় এখনকার ছদ্ম সেনাশাসনই চলতে থাকবে।
লেখক: আলতাফ পারভেজ , ইতিহাস বিষয়ে গবেষক