শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেষ্টা এবং প্রতিবিপ্লব উভয়েই পরস্পরের দিকে চোখ রাঙিয়ে পাশাপাশি হাঁটছে এ মুহূর্তে, যা দীর্ঘস্থায়ী এক রাজনৈতিক ‘যুদ্ধের’ আভাস দিচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মজলুমরা শ্রীলঙ্কার চলতি গণ–আন্দোলনকে বেশ সহানুভূতির চোখে দেখছেন বলে প্রচারমাধ্যমে সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু রুশ বিপ্লবের নায়ক ভ্লাদিমির লেনিন বলতেন, বিপ্লব কোনো ভোজসভা নয়। আমূল পরিবর্তনবাদী যেকোনো রাজনৈতিক অধ্যায় সম্পর্কেও লেনিনের কথা খাটে।
লেনিন–পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বজুড়ে ‘রাষ্ট্র’ এবং তার অধিপতি শ্রেণি বিস্ময়করভাবে শক্তপোক্ত হয়েছে। যেকোনো মূল্যে ‘স্থিতিশীলতা’ রক্ষায় তারা আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি সমর্থ। পেগাসাসের মতো প্রযুক্তির কল্যাণে পরিবর্তনবাদী চিন্তা একমুহূর্তের জন্যও এখন আর নজরদারির বাইরে নেই।
কিন্তু এর মধ্যেও কোনো কোনো দেশে পরিবর্তনের রাজনীতি এগোয় এবং এগোচ্ছে। সব দেশে নাগরিকেরা দুঃশাসনের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে নেই। লঙ্কায় সেই স্বাভাবিক সাহসেরই এক দফা ঝলক দেখল বিশ্ব। ইতিমধ্যে ১৭ জুলাই এ আন্দোলনের বয়স ১০০ দিন পেরিয়েছে। শততম দিনের আগেই তাদের বড় সফলতা এসেছিল। প্রতিদিন একের পর এক বাধার মুখেও পড়ছে এ আন্দোলন।
সর্বশেষ সেখানে জারি হলো ‘জরুরি অবস্থা’, যা একই সঙ্গে অনেক সংশয় তৈরি করেছে রাজনৈতিক চিন্তকদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘দুঃশাসক’কে তাড়াতে সক্ষম হলেও লঙ্কার বর্তমান আন্দোলন আর বাড়তি কিছু অর্জন করতে সমর্থ হবে কি না? বিভিন্ন দেশে মানুষ আগ্রহভরে এ–ও জানতে চাইছে—ঠিক এ মুহূর্তে দেশটিতে কী ঘটছে? ‘রাষ্ট্র’ হিসেবে লঙ্কা গণ-আন্দোলনের রেডিক্যাল দাবিগুলো কীভাবে মোকাবিলা করছে? সেখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারার মধ্যে মতাদর্শিক সংগ্রামের অবস্থাটা কী রকম?
সবারই হয়তো স্মরণ আছে, লঙ্কায় আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি ছিল দুটি: প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। এ দুই দাবির পাশাপাশি আরও কিছু দাবি ছিল এবং আছে। যার মধ্যে একটা হলো নতুন সংবিধান তৈরি বা বর্তমান সংবিধানের এমন সংস্কার, যাতে ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। বর্তমান সংবিধানে দেশটির প্রায় সব নির্বাহী ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে।
দাবিদাওয়ার এ চিত্রের পাশাপাশি দাবি উত্থাপনকারীদের বিচিত্র ধরনটিও আমলে নেওয়ার মতো। লঙ্কার গণ–আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে না হলেও তাতে রাজনীতিসচেতন তরুণ-তরুণীরা রয়েছেন। আছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও। আবার এই দুই গোষ্ঠীর বাইরের মানুষও রয়েছে বড় সংখ্যায়, যারা রাজনৈতিকভাবে ‘সুশিক্ষিত’ না হলেও রাজাপক্ষেদের শাসনে ত্যক্তবিরক্ত। তারা এ আন্দোলনে যুক্ত হয়, অর্থনৈতিক দুরবস্থার চাপে দিশাহারা হয়ে। এ তিন ধারাই ওপরে উল্লিখিত প্রধান দুই দাবিতে একমত ছিল।
তৃতীয় দাবিটি ছিল মুখ্যত রাজনীতিসচেতন তরুণ-তরুণীদের। তাঁদের আবার দুটি ধারা আছে। এক দল প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমাতে চায়। আরেক দল সেটার পাশাপাশি সংবিধানে আরও এমন কিছু বিষয় আনতে চায়, যা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিশ্চিত করে। বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চায় শেষোক্তরা। তারা মনে করছে, লঙ্কার নতুন বাস্তবতায় বর্তমান সংবিধান আর জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারছে না। এটা সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্রই কেবল কায়েম করে না—জনপ্রতিনিধিরা কেউ জনস্বার্থবিরোধী ভূমিকা রাখলে তাকে অহিংস পথে বিদায়েরও ব্যবস্থা নেই তাতে।
আন্দোলনকারীদের প্রথম দাবিটি অর্জিত হয়েছে বলেই লঙ্কা কিছুটা শান্ত এখন। আবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দাবি অর্জিত হয়নি বলেই দেশটিতে প্রবল অস্বস্তি আছে। দ্বিতীয় দাবিটি কেবল যে অর্জিত হয়নি তা নয়, এখন এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে, আগের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেই ২০ জুলাই (আগামীকাল) রাজাপক্ষেদের দলের সমর্থন নিয়ে সংসদে ভোটাভুটিতে প্রেসিডেন্ট হয়ে আসতে পারেন।
সেটা ঘটলে পুরো ব্যাপারটি হবে আন্দোলনের প্রতি সাংবিধানিক এক বিশ্বাসঘাতকতা। সে রকম হলে জনতার মধ্যে প্রতারিত হওয়ার বোধ বাড়বে এবং গণ-আন্দোলন কোনো না কোনো নতুন আদলে আবার ফিরবে। তবে সে রকম সম্ভাবনা সত্ত্বেও বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার সাংবিধানিক সুযোগ আছে। এমনকি তিনি প্রেসিডেন্ট না হলেও এমন কেউ হয়তো হবেন, যাঁর পেছনে রাজাপক্ষেদের প্রভাব কাজ করবে।
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে। সর্বশেষ খবর হলো, এ পর্যন্ত চারজন এ পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রথমজন হলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। পার্লামেন্টে তাঁর দলের এমপি মাত্র একজন। মনে করা হচ্ছে তাঁকে মদদ দেবেন রাজাপক্ষেদের অনুসারী এমপিরা।
দ্বিতীয় প্রার্থী ডুল্লাস আলাহপেরুমা। ইনিও রাজাপক্ষেদের দলের লোক। তৃতীয় প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা। প্রধান বিরোধী দলের নেতা তিনি। অনূড়া কুমার দেশনায়েকে নামের আরেকজন প্রার্থী আছেন অপর বিরোধী দল জেভিপির পক্ষ থেকে। দেখা যাচ্ছে, রাজাপক্ষেদের দল থেকে প্রার্থী আছেন দুজন। তাঁদের প্রতিপক্ষ শিবির থেকেও প্রার্থী আছেন দুজন। প্রার্থী সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে।
বর্তমান পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলো এসএলপিপি। এ দলের পুরো নাম ‘শ্রীলঙ্কা পডুজানা পেরামুনা’। এটাই ক্ষমতাচ্যুত রাজাপক্ষেদের দল। তাদের আসন আছে ১৪৫টি। ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে এই দল চাইলে পছন্দের সদস্যকে জিতিয়ে নিতে পারে। বাকি সব বিরোধী দল একসঙ্গে হয়েও পডুজানা পেরামুনার প্রার্থীকে ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু সমস্যা হলো যদিও তারা ২০০০ সালের ভোটে জিতেছিল—কিন্তু সর্বশেষ জন-আন্দোলনের ভেতর দিয়ে এসএলপিপির প্রতি মাঠের জনরায় পাল্টে গেছে।
কিন্তু জনরায় পাল্টালেও পুরোনো পার্লামেন্ট কাজ করছে। ফলে সংসদীয় ক্ষমতার জোরে এসএলপিপি যদি রনিলকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে, সেটা হবে সরাসরি জনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। এখনো নিশ্চিত নয় তারা এ রকম অবস্থান নেবে কি না। দেশটির মধ্যপন্থী মানুষ আশা করছে, পার্লামেন্টে সব দল সর্বসম্মতভাবে এমন কাউকে প্রেসিডেন্ট করুক, যিনি চলমান অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে সবার হয়ে দেশবাসীকে নেতৃত্ব দেবেন।
কিন্তু আপাতত পিছু হটে হলেও নিজেদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখতে এবং বিচার-আচার এড়াতে হলে রাজাপক্ষে গোত্র রনিল বা নিজেদের পছন্দের কাউকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারে। গোতাবায়া রাজাপক্ষে সিঙ্গাপুর চলে গেলেও মাহিন্দা ও বাসিল রাজাপক্ষে এখনো লঙ্কায় আছেন।
দাবার বোর্ড থেকে যে তাঁদের মনোযোগ সরেনি, রনিলের নড়াচড়া দেখলে সেটা বোঝা যায়। ফলে ৯ জুলাইয়ের আতশবাজির পরও লঙ্কায় প্রবল উদ্বেগ আছে। গণ–আন্দোলন এখন সাংবিধানিক এক ‘প্রতিক্রিয়াশীলতা’র মুখে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণ সম্ভব হতো, যদি আন্দোলনকারীরা ‘সাংবিধানিকভাবে ভবিষ্যৎ খোঁজা’র পরিবর্তে রনিলকেও ক্ষমতাচ্যুত করে আন্দোলন–সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নতুন প্রেসিডেন্ট ও নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়ে দেশকে সংবিধান প্রণয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু আন্দোলনের ‘অসাংবিধানিক’ সেই অভিমুখের জন্য লঙ্কার মেঠো রাজনীতি আপাতত প্রস্তুত নেই।
শ্রীলঙ্কার সিংহলি সমাজের প্রধান ‘দল’ এসএলপিপি এবং এসজেবি (সঙ্গী জন বালাওয়েগা)। এই দুই শক্তিই স্থিতিশীলতাপন্থী বুর্জোয়া দল। প্রথমটি গড়ে উঠেছে পুরোনো ফ্রিডম পার্টি থেকে। পরেরটি এসেছে পুরোনো ইউনাইটেড পার্টি থেকে। দ্বিতীয় দলটি সংবিধানের সংশোধন চাইলেও দেশে অসাংবিধানিক কোনো বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন চায় না।
কিন্তু দ্বিতীয় সারির জনতা বিমুক্তি পেরামুনা বা জেভিপি এবং ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টি বা এফএসপি বলছে নির্বাহী ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির শাসন পাল্টাতে লঙ্কার দরকার সংবিধানের পরিবর্তন। এর মধ্যে এফএসপি দল হিসেবে ছোট হলেও এখন খুব আলোচিত। এফএসপির জন্ম হয়েছে জেভিপির গর্ভ থেকে।
বিগত এক শ দিনের আন্দোলনে জেভিপি ও এফএসপির ছেলেমেয়েরাই অগ্রণী ভূমিকায় ছিল। এসএলপিপি এবং এসজেবির অভিযোগ, এফএসপি এ আন্দোলনে সহিংসতার ব্যবহার ঘটাতে চেষ্টা করেছে বারবার। একই রকম অভিযোগ জেভিপির বিরুদ্ধেও।
শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে জেভিপির উত্থান বহু আগে। ১৯৭১ ও ১৯৮৮ সালে দুবার তারা সশস্ত্রভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়। তাদের উভয় চেষ্টায় ছিল ব্যাপক সশস্ত্র হঠকারিতা ও সহিংসতা। সেসব অভিজ্ঞতার ফলে তিনটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে। প্রথমত বাম রেডিক্যালদের লঙ্কার মধ্যবিত্তরা খুব ভয় পায়।
দ্বিতীয়ত উভয় ঘটনায় জেভিপির সামনের সারির নেতা-কর্মী সবাইকে হত্যা করে রাষ্ট্র। তৃতীয়ত জেভিপির নিজের রাজনীতিও সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থানের ধারা থেকে নির্বাচনপন্থী সংবিধানবাদী ধারায় ঝুঁকে পড়ে। তার এই ‘আদর্শিক পরিবর্তনের’ কারণে জেভিপি পরিসর থেকে উত্থান ঘটে এফএসপির। বলা যায়, লঙ্কার মার্ক্সবাদী রাজনীতি জেভিপি থেকে এখন এফএসপি শিবিরের ঢুকে পড়েছে। এবারের গণ–আন্দোলনের এফএসপির ছাত্রসংগঠন মানুষের সাহসের বড় উৎস ছিল।
জেভিপি ও এফএসপি উভয়ে সাংগঠনিক কাজে মাঝেমধ্যে বলপ্রয়োগ করে বলে অভিযোগ আছে। ঠিক এ কারণেই এবার যখন দেশজুড়ে গণ–অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন সবার নজর ছিল জেভিপির দিকে। চলতি আন্দোলনে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়লেও তারা আন্দোলনকে সশস্ত্র পথে নিয়ে ক্ষমতা দখলের কোনো চেষ্টা করেছে বলে দেখা যায় না।
সে রকম গণভিত্তি এখন আর তাদের নেই। ইচ্ছাও হয়তো নেই। তারপরও এফএসপি ও জেভিপি যাতে আন্দোলনকে ঘিরে অতি-রেডিক্যাল কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারে, সে জন্য নিয়মতান্ত্রিক বিরোধী দলগুলো খুব সতর্ক ছিল এবং জন-আন্দোলনকে সহিংস অবস্থা থেকে মাঝেমধ্যেই লাগাম টেনে শান্ত রেখেছে। কিন্তু এখন রাজাপক্ষেদের হাতে গণ–আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে সংসদে পর্যুদস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখতে পেয়ে এফএসপি ও জেভিপি কর্মীরা ওই সব বিরোধী দলকে আপসকামিতার জন্য দোষ দিচ্ছেন।
আর নিজেরা সাংবিধানিক সংস্কারের আওয়াজ জোরদার করছেন। এফএসপি বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণ যে রায়ই দিক, চলতি জন–আন্দোলনের ভেতর দিয়ে আগের সেই ‘ম্যান্ডেট’ অকার্যকর ও শূন্য হয়ে গেছে।
বরং এখন রাজপথে যে জনরায় দেওয়া হয়েছে এবং যার প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট পালিয়েছেন, তার আলোকে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি পাল্টে নতুন একটি সংবিধান তৈরি করতে হবে। বলা বাহুল্য, এসএলপিপি ও এসজেবি এতটা আমূল কোনো পরিবর্তন চায় না।
ফলে এসএলপিপি, এসজেবি এবং জেভিপি-এফএসপি এ ত্রিমুখী ধারায় এগোচ্ছে এখনকার লঙ্কার রাজনীতি। আবার অদৃশ্য অপর ধারা হিসেবে আছে সামরিক আমলাতন্ত্র। এই চার শক্তির ছায়ার ভেতর থেকে ক্রমে বেরিয়ে আসছেন ব্যক্তিগতভাবে আরেকজন—সাবেক সেনা কর্মকর্তা শরৎ ফনসেকা।
সিংহলি প্রভাবশালীদের অনেকে মনে করছেন, লঙ্কাকে এ মুহূর্তে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম কেবল ফনসেকা। তাঁর প্রতি সেনাবাহিনীর একাংশেরও সহানুভূতি থাকার আঁচ-অনুমান আছে। চলতি জন-আন্দোলনেও ছিলেন তিনি। তবে তামিলরা তাঁকে গোতাবায়ার মতোই যুদ্ধাপরাধী মনে করে।
এ রকম এক জটিল অবস্থায় লঙ্কায় গতকাল জারি হলো জরুরি অবস্থা। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিলের এ পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে ইচ্ছুক। তাঁর পেছনে সামরিক আমলাতন্ত্রেরও প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকতে পারে। তবে তাঁকে টিকিয়ে রাখার পদক্ষেপ লঙ্কায় জনপ্রিয়তা পাবে না। এতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দুয়ারও তেমন খুলবে না।
এককথায় বললে, লঙ্কায় রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেষ্টা এবং প্রতিবিপ্লব উভয়েই পরস্পরের দিকে চোখ রাঙিয়ে পাশাপাশি হাঁটছে এ মুহূর্তে, যা দীর্ঘস্থায়ী এক রাজনৈতিক ‘যুদ্ধের’ আভাস দিচ্ছে। যে যুদ্ধে সবার নজর থাকবে বিশেষভাবে শরৎ ফনসেকা এবং এফএসপি নেতা কুমার গুনারত্নের দিকে।
ইতিহাসের কৌতুক হলো শরৎ ফনসেকা সেনাপ্রধান থাকাকালে তরুণ ‘কুমার’কে সশস্ত্র রাজনীতির জন্য আটক করা হয়েছিল। ইতিহাসের সেই অধ্যায় পেরিয়ে উভয়ে এখন পরস্পর এক কাতারে দাঁড়িয়ে—কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতি নিয়ে। লঙ্কার জুলাই অভ্যুত্থানের ভবিষ্যৎ হয়তো এ দুজনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে। কিংবা জিতবে ‘প্রতিবিপ্লব’।
আলতাফ পারভেজ শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম (ঐতিহ্য, ২০১৭) গ্রন্থের লেখক