থাইল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো বড় ধরনের জয় নিশ্চিত করেছে। দেশটিতে ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষে লিবারেল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি এবং ফেউ থাই পার্টি সেনাসমর্থিত জোটের থেকে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তবে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে প্রায় এক দশকের সেনাসমর্থিত শাসনের অবসান করতে তাঁদের আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা না হলেও প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, জয়ের দিক থেকে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি শীর্ষ স্থানে আছে। এর পরের অবস্থানে আছে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাসিত নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার ফেউ থাই পার্টি। রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, এ দুই দল থাইল্যান্ডের জান্তার রাজনৈতিক দল পালাং প্রাচারাত এবং সেনাসমর্থিত দল ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টির চেয়ে তিন গুণের বেশি আসনে জয়ী হতে যাচ্ছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ সোমবার থাইল্যান্ডের বিরোধী দল ফেউ থাই বলেছে, তারা সংস্কারপন্থী মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে যোগ দিতে রাজি আছে। জোট সরকারে যোগ দিতে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা তারা গ্রহণ করছে। দলটি আরও বলেছে, পিটা লিমজারোয়েনরাত সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার অর্জন করেছেন।
মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা ৪২ বছর বয়সী পিটা লিমজারোয়েনরাত সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর দলীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। তাঁর অবস্থান স্বৈরশাসক ও সেনাসমর্থিত দলগুলোর বিপক্ষে থাকবে।
‘ফেউ থাই ভুল লড়াই লড়েছে। ফেউ থাই জনতুষ্টি অর্জনের লড়াই লড়েছে, যেটিতে তারা আগে থেকেই জয়ী হয়ে আছে। মুভ ফরোয়ার্ড এ লড়াইকে আরেক ধাপ এগিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দিকে নিয়ে গেছে। এটি থাই রাজনীতিতে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র।’চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থিতিনান পংশুধিরাক
তিনি মনে করেন থাইল্যান্ডে এখন আর সংখ্যালঘু সরকার (নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও কোনো দল বা জোটের সরকার গঠন করা) গঠনের সুযোগ নেই। এখন তিনি ফেউ থাই দলের সঙ্গে জোট গড়তে প্রস্তুত আছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হতে চান।
এদিকে ফেউ থাইয়ের প্রার্থী ৩৬ বছর বয়সী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ডের অর্জনে তিনি খুশি। তবে জোট গঠন নিয়ে আলোচনার সময় এখনো হয়নি।
তবে জোট গঠন হলেও ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের পর সেনা সরকার প্রণীত সংসদীয় বিধির কারণে তারা সরকার গঠনের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। ওই বিধি সেনাসমর্থিত দলগুলোকে সুবিধা দেয়।
এখন সরকার গঠন করতে হলে বিরোধী দলগুলোকে জান্তার নিয়োগকৃত সিনেট সদস্যসহ বিভিন্ন শিবিরের কাছ থেকে সমর্থন পেতে হবে। কারও কারও সঙ্গে তাদের চুক্তিও করতে হতে পারে। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং পরবর্তী প্রশাসন গঠন করবেন, তা সিনেট সদস্যদের ভোটের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। তবে এ সিনেট সেনাসমর্থিত দলগুলোর পক্ষে।
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্রদলগুলোর জন্য বড় ধাক্কা। তবে সংসদীয় বিধিগুলো অনুকূলে থাকায় এবং তাদের পেছনে প্রভাবশালীদের হাত থাকায় এখনো তাদের সরকার গঠনের সুযোগ আছে।
এখন সরকার গঠন করতে হলে বিরোধী দলগুলোকে জান্তার নিয়োগকৃত সিনেট সদস্যসহ বিভিন্ন শিবিরের কাছ থেকে সমর্থন পেতে হবে। কারও কারও সঙ্গে তাদের চুক্তিও করতে হতে পারে। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং পরবর্তী প্রশাসন গঠন করবেন, তা সিনেট সদস্যদের ভোটের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। তবে এ সিনেট সেনাসমর্থিত দলগুলোর পক্ষে।
থাইল্যান্ডে সবশেষ সেনা অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সাবেক সেনা জেনারেল ও বর্তমান থাই প্রধানমন্ত্রী প্রাউথ চান-ওচা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, সরকারের পরিবর্তন এলে তা সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জনমত জরিপে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাসিত নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার নেতৃত্বাধীন দল ফেউ থাই পার্টির জয়ের আভাস দেওয়া হয়েছিল। তবে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি তাদেরও ছাপিয়ে গেছে।
চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থিতিনান পংশুধিরাক মনে করেন, মুভ ফরোয়ার্ডের এ উত্থান থাই রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ‘ফেউ থাই ভুল লড়াই লড়েছে। ফেউ থাই জনতুষ্টি অর্জনের লড়াই লড়েছে, যেটিতে তারা আগে থেকেই জয়ী হয়ে আছে। মুভ ফরোয়ার্ড এ লড়াইকে আরেক ধাপ এগিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দিকে নিয়ে গেছে। এটি থাই রাজনীতিতে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র।’