থাইল্যান্ডের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে (প্রি-স্কুল ডে-কেয়ার সেন্টার) সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার হামলার ঘটনায় ২৩ শিশুসহ ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। ওই হামলাকারী দিবাযত্ন কেন্দ্রে থাকা ঘুমন্ত শিশুদের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছেন। এতেই এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কেন্দ্রে থাকা ২৪ শিশুর মধ্যে ২৩ শিশুই নিহত হয়েছেন। বেঁচে আছে শুধু একটি শিশু।
বিবিসি অনলাইনের আজ শুক্রবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নং বুয়া লাম্ফু প্রদেশে ঘটে যাওয়া এ মর্মান্তিক ঘটনার এমন বিবরণ দিয়েছেন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের শিক্ষকসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা। এর আগে এএফপি, রয়টার্সের খবরে হামলায় ২২ শিশুসহ ৩৮ জন নিহত হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক নান্থিচা পুঞ্চুম বলেন, শিশুদের ঘুমের জন্য পাঠিয়ে তিনি দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছিলেন। ঠিক এমন সময় তিনি পরপর পাঁচটি গুলির শব্দ শুনতে পান। তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে সাধারণত ৯২ জন শিশু থাকে। বাস না পাওয়া ও বৃষ্টির কারণে আটকা পড়ায় হামলার সময় ২৪ জন শিশু ছিল। এদের মধ্যে মাত্র একটি শিশু বেঁচে আছে।
নান্থিচা পুঞ্চুম বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটবে, তা কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি...এরপর কী করতে হবে, তা জানি না। এই মুহূর্তে কোনো কিছুই ভাবতে পারছি না।’
এই শিক্ষক বলেন, কেন্দ্রের অপর একজন শিক্ষক ওই হামলাকারীকে এক শিশুর অভিভাবক (বাবা) হিসেবে চিনতে পেরেছেন। তবে ওই শিশু প্রায় এক মাস ধরে কেন্দ্রে আসে না। ওই অভিভাবক কখনো উগ্র ছিলেন না। ছেলেকে কেন্দ্রে নামিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সর্বদা ভদ্র থাকতেন। খুব আড্ডাবাজ মানুষ তিনি। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) তাঁর এক সহকর্মী জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির চোখের কাছে কেটে গেছে, তারপরও তাঁর কোনো বিকার নেই।
নান্থিচা পুঞ্চুম বলেন, শিশুরা ঘুমাচ্ছিল দেখে শিক্ষকেরা প্রধান দরজা বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু ওই হামলাকারী দরজা ভেঙে ঘুমন্ত শিশুদের ঘরে ঢুকে পড়েন। হামলাকারী বাইরে যেখানে গাড়ি পার্ক করে রেখেছিলেন, সেখানে কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মী খাচ্ছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য করেও গুলি চালান হামলাকারী। এতে সেখানে থাকা চার কর্মী নিহত হয়েছেন। এরপরই তিনি দরজা ভেঙে শিশুদের ঘরে ঢুকে এলোপাতাড়ি হামলা চালাতে থাকেন।
শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের একজন শিক্ষক বলেছেন, তিনি দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। হামলাকারীর হাতে বন্দুক ও ছুরি ছিল। হামলাকারী দরজায় গুলি করে ভেঙে ফেলে ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং ঘুমন্ত শিশুদের ওপর গুলি চালান। এতে ২৩ শিশু নিহত হয়। এদের মধ্যে দুই বছরের কম বয়সী শিশুও ছিল। তিনি বলেন, তিনি আতশবাজির মতো গুলির শব্দ শুনছিলেন। মেঝেতে তাঁর দুই সহকর্মীকে পড়ে থাকতে দেখেছেন। এরপর হামলাকারী তাঁর দিকে এগোতে থাকেন। এ সময় তিনি অন্য সহকর্মীদের একটি কক্ষে দ্রুত ঢুকতে বলেন। ওই কক্ষের দরজা বন্ধ করে তাঁরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন।
শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের পাশেই কর্মরত জেলা কর্মকর্তা জিদাপা বুনসোম বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে আটকা পড়ায় হামলার সময় শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম শিশু উপস্থিত ছিল।
জিদাপা বুনসোম বলেন, দুপুরের খাবারের সময় ওই হামলাকারী শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন। প্রথমেই তিনি ওই কেন্দ্রের চার-পাঁচজন কর্মীকে গুলি করেন। এরপর জোর করে একটি তালাবদ্ধ কক্ষে ঢুকে সেখানে থাকা ঘুমন্ত শিশুদের ওপর হামলা চালান। হঠাৎ গুলির শব্দকে শুরুতে মানুষ আতশবাজি ভেবেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘এটা মর্মান্তিক ঘটনা। সবাই খুব ভয় পেয়েছিলাম। বিষয়টি গুলির শব্দ বোঝার পরেই সবাই লুকানোর জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেক শিশু নিহত হয়েছে। এর মতো মর্মান্তিক ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি।’
ঘটনাস্থল থেকে পাবিনা পুরিচান নামের একজন শিক্ষক পালাতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, হামলাকারীর হাতে থাকা ছুরিটি ঘাস কাটা ছুরির মতো কিছুটা বাঁকা ছিল।
৩১ বছর বয়সী পাবিনা পুরিচান বলেন, তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে একটি দোকানের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওই হামলাকারীকে ছুরিসহ অন্য এক চালককে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। রাস্তায় ওই হামলাকারী ইচ্ছা করেই অন্যদের ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। হামলাকারী রাস্তায় একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে দুই আরোহী আহত হন। চারদিকে রক্ত ছড়িয়েছিল। এসব দেখে তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে সরে গেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ জানিয়েছে, ওই হামলাকারীর নাম পানিয়া খামরাব। তিনি পুলিশের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন। মাদক গ্রহণের অভিযোগে সম্প্রতি তাঁকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ব্রডকাস্টার থাইপিবিএস জানিয়েছে, হামলাকারী পানিয়া খামরাবের ছেলে ওই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে থাকত। হামলার আগে তিনি খুব উত্তেজিত ছিলেন। কেন্দ্রে নিজের সন্তানকে দেখতে না পেয়ে তিনি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকেন।