বন্ধুকে সুরে সুরে ডাকছেন কংথং গ্রামের এক তরুণ
বন্ধুকে সুরে সুরে ডাকছেন কংথং গ্রামের এক তরুণ

যেখানে সন্তানের নাম রাখা হয় সুরে সুরে

গ্রামটিতে ঢুকলেই মাঝেমধ্যে ভেসে আসবে সুরের আওয়াজ। প্রথম শোনায় মনে হবে হয়তো কোনো পাখি ডাকছে। কিন্তু সংবিৎ ফিরে আসবে একটু পরেই, যখন দেখা যাবে এটা কোনো পাখির নয়, মানুষের ডাক। আর এই সুর ওই গ্রামের বাসিন্দারা মনের আনন্দে নয়, প্রয়োজনে দিয়ে থাকেন। জেনে অবাক হতেই হয়, এটি তাদের নামের অংশ। অর্থাৎ ওই গ্রামের বাসিন্দারা একে অন্যকে কোনো বর্ণযুক্ত শব্দে নয়, মুখে আলাদা আলাদা সুর তুলে ডেকে থাকে।

গ্রামটির অবস্থান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব কাশি পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। নাম কংথং। উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা গভীর গিরিখাতে ছোট্ট এই গ্রামের অবস্থান। ছবির মতো অনিন্দ্য সুন্দর এই গ্রামকে বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে মনোনয়ন হিসেবে পাঠিয়েছিল ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়।

কংথং গ্রামের বাসিন্দাদের সাধারণত দুটি করে নাম থাকে। এর একটি দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য, যেটি কাগজে-কলমে লেখা যায়। আর অন্যটি ডাকনাম; যা নাম নয়, সুরের টান মাত্র।

কংথং গ্রামের মায়েরা জন্মের পরপরই তাঁদের সন্তানকে একটি সুরে ডেকে থাকেন। এই সুরের ব্যাপ্তি হয় ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড। একটি সুর একজন ব্যক্তির জন্যই নির্ধারিত। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সুরটিরও মৃত্যু ঘটে। এই সুর আর কারও নামে ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত মেয়েদের ডাকনামের সুর ছেলের নামের তুলনায় কোমল হয়।

কংথং গ্রামের বাসিন্দারা পূর্বপুরুষদের স্মরণে এভাবে গানের সুরকে ডাকনাম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এই সুরেরও একটি পরিচিতি রয়েছে। সুর ধরে ডাকনাম রাখার এই প্রথাকে বলা হয় জিঙ্গ্রওয়াই আইওবেই। এর অর্থ গোষ্ঠীর প্রথম নারীর গান।

জনপ্রিয় এই পর্যটন গ্রামে যেতে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে সড়কপথে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। গ্রামটিতে পর্যটকদের রাত কাটানোর জন্য রয়েছে চারটি কুটির।