শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া দিশানায়েকে জানিয়েছেন, ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এমন কোনো কাজে শ্রীলঙ্কা তার জমি কাউকে ব্যবহার করতে দেবে না।
শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনায় দিশানায়েকে এ আশ্বাস দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার এক দিনের সফরে জয়শঙ্কর কলম্বোয় যান। দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর জয়শঙ্করই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি শ্রীলঙ্কা সফরে গেলেন। প্রেসিডেন্ট ছাড়াও জয়শঙ্কর শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হারিনি অমরসুরিয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিতা হেরাথের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা ছাড়াও জয়শঙ্কর দেখা করেছেন বিরোধী এসজেবি নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল রাতে জারি করা এক বিবৃতিতে জানায়, দুই দেশের সম্পর্ক ও স্বার্থ পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দুই দেশই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় জরুরি। দুই দেশের নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা পারস্পরিক বিশ্বাস, স্বচ্ছতা ও স্পর্শকাতরতার উপলব্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে আরও একবার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দেশের জমি কখনো এমনভাবে ব্যবহৃত হতে দেওয়া হবে না, যা ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে উদ্বেগজনক হতে পারে।
দিশানায়েকের দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) পরিচয় উগ্র জাতীয়তাবাদী হিসেবে। সেই জাতীয়তাবাদের অভিমুখ বরাবরই ছিল ভারতবিরোধী। ১৯৭১ ও ১৯৮৭ সালে অসফল রক্তাক্ত বিপ্লবও তারা সংগঠিত করেছিল। পরবর্তী সময়ে জেভিপি তার নীতিতে পরিবর্তন আনে। দিশানায়েকের নেতৃত্বে জনজাগরণের মধ্য দিয়ে তারা গোতাবায়া সরকারকে উৎখাত করতেও সফল হয়। চীনপন্থী বলে পরিচিত দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অবশ্য এক স্বতন্ত্র ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। নিজেকে তিনি এখন বাস্তববাদী বলে পরিচিত করতে চাইছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দিশানায়েকে বলেছেন, চীন ও ভারতের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে তিনি স্যান্ডউইচ হতে দেবেন না। দুই দেশই শ্রীলঙ্কার মূল্যবান বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ অংশীদার।
এই অংশীদারত্বের নিদর্শন হিসেবেই জয়শঙ্কর এই সফরে এসেছেন, শ্রীলঙ্কায় যেসব ভারতীয় প্রকল্পের কাজ চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। যে দুই কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তা অনুদান হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার রেলওয়েকে ভারত ২২টি ডিজেল লোকোমোটিভ উপহার দেবে।
জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে বলেন, সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ে জনগণের আশা পূরণ করতে ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতা খুবই জরুরি ও কার্যকর।