জাপানে প্রতিবছর হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়। ২০২২ সালে দেশটিতে হারিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৮৪ হাজার ৯১০ জন। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৫ হাজার ৬৯২ জন বেশি। সম্প্রতি জাপানের জাতীয় পুলিশ এজেন্সি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
জাপানে প্রতিবছর নাগরিক জীবনের বিভিন্ন দিকের সংখ্যাগত হিসাব প্রকাশ করা হয়। এই হিসাবে মানুষের হারিয়ে যাওয়ার তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জাপানে প্রতিবছর হারানো মানুষের একটা বড় অংশ বার্ধক্যজনিত ডিমেনশিয়া (স্মৃতিক্ষয়) রোগে আক্রান্ত। ২০২২ সালে ১৮ হাজার ৭০৯ জন ডিমেনশিয়া রোগীর হারিয়ে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। যে সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
জাপানে ২০১২ সাল থেকে ডিমেনশিয়া রোগীদের হারিয়ে যাওয়ার হিসাব সংরক্ষণ শুরু হয়। সে বছর ৯ হাজার ৬০৭ জন ডিমেনশিয়া রোগীর হারিয়ে যাওয়ার তথ্য পায় পুলিশ। এর পর থেকে প্রতিবছরই এই সংখ্যা বাড়তে দেখা যায়। গত বছর সর্বোচ্চসংখ্যক ডিমেনশিয়া রোগী হারিয়ে যান।
অবশ্য অন্য বয়সীদের তুলনায় হারিয়ে যাওয়া ডিমেনশিয়া রোগীদের খুঁজে পাওয়ার হারও অনেক বেশি। যেমন ২০২২ সালে এ রকম ১৭ হাজার ৯২৩ জনের সন্ধান পাওয়া যায়। গত বছর নিখোঁজ ডিমেনশিয়া রোগীর মধ্যে ৪৯১ জনের মৃত্যু হয় বলেও জানা গেছে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, জাপানি সমাজ সার্বিকভাবে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয় স্মৃতিক্ষয় রোগে ভুগতে থাকা মানুষের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে। ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।
জাপানে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি ডিমেনশিয়া রোগী রয়েছেন বলে বলা হয়ে থাকে। ২০২৫ সালে এই সংখ্যা ৭০ লাখে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিমেনশিয়ায় ভুগতে থাকা বৃদ্ধদের অবস্থান ও সময় সম্পর্কে ধারণা ধোঁয়াশাপূর্ণ হয়ে থাকে। এ কারণে তাঁরা বাড়ি থেকে বের হলে কোথায় অবস্থান করছেন, সে সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে ভুগতে থাকেন। এভাবে তাঁরা একসময় হারিয়ে যান।
জাপানে পরিবারের আকার ছোট হয়ে আসছে। ফলে অনেক বৃদ্ধকে বাড়িতে একা অবস্থান করতে হয়। এমন বৃদ্ধদের বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যাওয়া ক্রমেই এক বড় এক সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সমস্যার সুরাহা কীভাবে হবে, তা নিয়ে সরকারের পাশাপাশি কল্যাণ সেবায় জড়িত বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এখন কাজ করছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে উচ্চপ্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে। যেমন বৃদ্ধদের শরীরে উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্র যুক্ত করা। বৃদ্ধরা কোথায় অবস্থান করছেন, সেই বার্তা এই যন্ত্র পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেয়।
তবে যন্ত্র যুক্ত করার এই প্রচেষ্টায় সমস্যার সার্বিক সমাধান নেই। টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে হলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এগিয়ে নিতে হবে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি বয়স্ক ব্যক্তিদের সমাজে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে পারার উপায় খুঁজে দেখা উচিত হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
হারিয়ে যাওয়া মানুষের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তরুণ-তরুণীরা। তাঁদের বয়স ২০-এর কোঠায়। এই বয়সসীমার ১৬ হাজার ৮৪৮ জন গত বছর হঠাৎ করে হারিয়ে গেছেন।
তরুণ-তরুণীদের এভাবে হারিয়ে যাওয়ার পেছনের কী কারণ থাকতে পারে? পুলিশ বলছে, কারণগুলো অনেকাংশে তাঁদের কর্মজীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। চাকরি হারানো বা কাজের জায়গায় সম্পর্কের টানাপোড়েন এই বয়সসীমার তরুণদের অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি, হতাশার জন্ম দেয়। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তাঁরা হারিয়ে যাওয়ার পথ বেছে নেয়।
ইংরেজিতে যাদের ‘টিন-এজার’ (কিশোর-কিশোরী) বলা হয়, তাদের মধ্যেও হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে। ২০২২ সালে ১৪ হাজার ৯৫৯ জন কিশোর-কিশোরীর হারিয়ে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পারিবারিক সম্পর্কে দেখা দেওয়া ফাটলের কথা বলা হচ্ছে।