পাঁচ দফা শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের প্রতি আসিয়ানের আহ্বান

আসিয়ানের পতাকা
ছবি: রয়টার্স

রাজনৈতিক সংকট অবসানে দুই বছর আগে মতৈক্য হওয়া পাঁচ দফা শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ান। আজ শনিবার ইন্দোনেশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর এই জোটের মন্ত্রী পর্যায়ের দুই দিনের বৈঠক শেষে এ আহ্বান জানানো হয়। এদিকে, মিয়ানমারের ৩৭টি প্রশাসনিক এলাকায় নতুন করে সামরিক আইন জারি করেছে জান্তা।

চলতি বছর ১০ সদস্যের আসিয়ান জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে ইন্দোনেশিয়া। এ বছরের শেষ দিকে জোটভুক্ত দেশগুলোর সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশগ্রহণে বার্ষিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশটি। তবে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমার পরিস্থিতিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে অস্থিরতা চলছে।

বৈঠক শেষে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি সাংবাদিকদের বলেন, ২০২১ সালের এপ্রিলে সম্মত হওয়া ‘পাঁচ দফা ঐকমত্য’ বাস্তবায়ন পরিকল্পনা আসিয়ান সদস্যদের কাছে প্রস্তাব করেছে জাকার্তা। এই পাঁচ দফায় সহিংসতার অবসান এবং সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই পরিকল্পনার বিষয়ে সব সদস্যরাষ্ট্রের ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। তবে কখন, কীভাবে তারা এই ঐকমত্য বাস্তবায়নের আশা করছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

সামরিক শাসনাধীন মিয়ানমার এখনো আসিয়ানের সদস্য হিসেবে রয়েছে। তবে সামরিক বাহিনী ও অভ্যুত্থান-বিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সামরিক সরকারের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না।

আসিয়ানের শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান শোয়ে। ‘অরাজনৈতিক প্রতিনিধি’ প্রেরণের প্রস্তাব দিলে সামরিক সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। নেপিডোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা পর্যায়ে সংলাপের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বিশেষ দূতের দপ্তর খোলার ঘোষণা দিয়েছে জাকার্তা।

৩৭ এলাকায় সামরিক আইন

এদিকে, বিরোধী-অধ্যুষিত নতুন কিছু এলাকায় সামরিক আইন জারি করেছে মিয়ানমার জান্তা। এসব এলাকায় কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ‘ভুয়া খবর ছড়ানো’র অভিযোগ আনা হলে সামরিক আদালতে ওই ব্যক্তির বিচার হবে। গত শুক্রবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ কথা জানিয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড ছাড়া সামরিক ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কোনো রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। আর সেটা অবশ্যই জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে হতে হবে। রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার পত্রিকার প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
মোট ৮টি রাজ্য ও অঞ্চলের ৩৭টি প্রশাসনিক এলাকা নতুন ব্যবস্থার আওতায় আসছে।

এসব রাজ্য ও অঞ্চল হলো সাগাইং, চিন, ম্যাগুই, ব্যাগো, মোন, কারেন, তানিনথায়ি ও কায়াহ। এসব এলাকায় অভ্যুত্থানবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স এবং আগে থেকে থাকা জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তা সেনাদের প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ চলে আসছে।

অভ্যুত্থানবিরোধীদের দমনপীড়নে মিয়ানমার জান্তা নতুন পথ খুঁজছে

আগে থেকেই দেশটির বাণিজ্যিক নগরী ইয়াঙ্গুনের ছয়টি আর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের পাঁচটি প্রশাসনিক এলাকায় একই ধরনের সামরিক আদালত চালু রয়েছে।

সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির সরকার উৎখাতের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিরতা চলছে। এরপর বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের ফলে দেশের বড় একটি অংশজুড়ে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়। যেসব এলাকায় অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধারা সক্রিয়, তাঁদের দমনে জান্তা সরকার নতুন পথ খুঁজছে বলে ঘোষিত নতুন পদক্ষেপে ইঙ্গিত মিলছে।