আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ‘কপ২৯’ চলাকালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে সমবেত হয়েছিলেন জি–২০–এর নেতারা। বাকুতে পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা গভীর আগ্রহ নিয়ে সেই দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আশা ছিল, রিও থেকে ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত বাকুতে আসবে, যা অর্থায়নের সমস্যার জট কাটাতে সাহায্য করবে। তবে গতকাল মঙ্গলবার আরেকবার হতাশা ছেয়ে গেল বাকুতে। পরিবেশের উন্নতিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও তার পদ্ধতি নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দড়ি–টানাটানির অবসান কীভাবে ঘটবে, এখনো তার স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই। সম্মেলন শেষ হতে বাকি আর মাত্র দুই দিন।
দর–কষাকষি নিয়ে আজারবাইজানের মুখ্য আলোচক ইয়ালচিন রাফিয়েভ অবশ্য আশা ছাড়ছেন না। তিনি জানিয়েছেন, আজ বুধবার রাতের মধ্যেই জলবায়ুর স্বার্থে নতুন ক্রমবর্ধিত পরিমাণগত লক্ষ্য, ইংরেজিতে যাকে বলা হচ্ছে ‘নিউ কিউমিউলেটিভ কোয়ান্টিটেটিভ গোল’ বা ‘এনসিকিউজি’, তার খসড়া চূড়ান্ত করে ফেলা হবে।
জলবায়ুর স্বার্থে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর উন্নত বিশ্ব উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার দিয়ে চলেছে। অথচ এই অর্থ সিন্ধুতে বিন্দুসম। এতে তাপমাত্রা কম তো হয়ইনি, বরং শূন্য দশমিক ৮ ডিগ্রি বেড়ে গেছে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ধরে রাখতে হলে এখন তাই প্রয়োজন বছরে ১ লাখ কোটি ডলার। এটাই নতুন লক্ষ্য বা ‘এনসিকিউজি’।
রিও সম্মেলনের ঘোষণায় জি–২০–এর নেতারা জলবায়ুর উন্নতিতে ‘বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়নে’ যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন; অর্থাৎ অন্তত ১ লাখ কোটি ডলারের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু সেই স্বীকৃতি নতুন কিছু নয়। গত বছর দিল্লিতে জি–২০ আসরেও নেতারা এই প্রয়োজন মেনে নিয়েছিলেন। বাকুতে সম্মিলিত পরিবেশকর্মীরা ভেবেছিলেন, কোথা থেকে কীভাবে উন্নত বিশ্ব সেই অর্থায়ন করবে, তার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত বা প্রতিশ্রুতি হয়তো রিও থেকে আসবে; কিন্তু তা এল না।
কপ২৯–এর প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবাইয়েভ গত সোমবার সরাসরিই জানিয়েছিলেন, রিও থেকে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি শোনার জন্য তাঁরা মুখিয়ে আছেন। কেননা, সেই প্রতিশ্রুতি ছাড়া বাকু সম্মেলন সফল হবে না। অথচ তা না হওয়ায় বাকুর সাফল্য নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
রিও ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমাদের আশা, বাকুতে সফলভাবে নতুন ক্রমবর্ধিত পরিমাণগত লক্ষ্য (এনসিকিউজি) স্থির করা হবে। কপ২৯–এর প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করি সেখানে আলোচনা সফল হবে।’
জাতিসংঘের ক্লাইমেট চেঞ্জ (জলবায়ু পরিবর্তন) বিষয়ক প্রধান সাইমন স্টিয়েল অবশ্য আশা ছাড়তে রাজি নন। তিনি বলেছেন, ‘রিও থেকে বাকুতে আলোচকদের কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠানো হয়েছে, অর্থায়নের নতুন লক্ষ্য তৈরি করেই যেন সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলন সফল করতে হবে। কেননা, এর সঙ্গে সবার স্বার্থ জড়িয়ে আছে।’
রাফায়েভও বলেছেন, ‘বাকুর প্রতি রিওর বার্তা হলো রাজনৈতিক ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করো।’
কিন্তু সেটা করাই এখন পর্যন্ত বেশ দুরূহ। এত দিন ধরে উন্নত বিশ্ব ও উন্নয়নশীল দরিদ্র দুনিয়ার মধ্যে এ নিয়ে তীব্র টানাপড়েন চলছে। ২০২৫ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত নতুন বার্ষিক অর্থায়নের যে লক্ষ্য ‘বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়নে’ উঠেছে, তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, সেই সংশয় সুরাহার কোনো ইতিবাচক লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
উন্নয়নশীল বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী, বছরে ১০ গুণ বেশি অর্থ উন্নত বিশ্ব দেবে কি না, দিলেও তার কতটা অনুদান আর কতটাই–বা ঋণ, সেই টানাপোড়েন অব্যাহত। সম্মেলন শুরুর আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদয়ে বাকুতে হতাশার যে মেঘ ছেয়েছে, রিওর জি–২০ সম্মেলন তা কাটাতে তো পারেইনি, বরং বাকুর আলোচকদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করল। এখন দেখার, অর্থায়নের প্রশ্নটি বিলিয়নে আটকে থাকে, নাকি ট্রিলিয়নে উন্নীত হয়।