পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ

শেষ মুহূর্তে অধিবেশন ডাকলেন প্রেসিডেন্ট আলভি

  • জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা নিয়ে জটিলতার কেন্দ্রে ছিল অবশিষ্ট সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ।

  • সরকার গঠনে পিএমএল-এন ও পিপিপির নেতৃত্বে ছয়দলীয় জোটের আলোচনা চলছে।

  • ২ মার্চের মধ্যেই ছয়দলীয় জোটের এ সরকার গঠিত হতে পারে।

শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এর আগে তাঁকে পাশ কাটিয়েই আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। স্থানীয় সময় আজ সকাল ১০টায় অধিবেশন বসবে। গতকাল বুধবার জাতীয় পরিষদ সচিবালয়ের এক নোটিশে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। পরে গতকাল রাতে প্রেসিডেন্ট আলভি বৃহস্পতিবার একই সময়ে অধিবেশন আহ্বান করেন বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জিও নিউজের খবরে জানানো হয়।

পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলকে (এসআইসি) সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় অধিবেশন ডাকতে অস্বীকৃতি জানান প্রেসিডেন্ট। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে কারাবন্দী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংরক্ষিত আসন পেতে এই দলে যোগ দিয়েছিলেন।

অধিবেশন ডাকতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রেসিডেন্ট আলভির সমালোচনায় মুখর হন পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতারা। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনেরও অভিযোগ আনেন তাঁরা।

প্রেসিডেন্ট আলভি অধিবেশন না ডাকার বিষয়ে অনড় থাকলে জাতীয় পরিষদের স্পিকার অধিবেশন আহ্বান করেন। তবে প্রেসিডেন্টকে পাশ কাটিয়ে স্পিকার অধিবেশন ডাকতে পারেন কি না, তা নিয়ে আইনি বিতর্ক শুরু হয়।

উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতে নির্বাচিত সব পার্লামেন্ট সদস্য শপথ নেবেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট ৩৩৬টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি আসন সংরক্ষিত। ৬০টি নারীদের এবং ১০টি সংখ্যালঘুদের জন্য।

পার্লামেন্ট সদস্যরা শপথ গ্রহণের পর স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন ও বিরোধীদলীয় নেতা ঠিক করা হবে। স্পিকার পদে সরদার আয়াজ সাদিককে মনোনয়ন দিয়েছে পিএমএল-এন। দলটির সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী ডেপুটি স্পিকার পদে পিপিপির প্রার্থী দেওয়ার কথা।

এদিকে গতকাল বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। তবে শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে হট্টগোল হয়েছে।

বিরোধের কেন্দ্রে সংরক্ষিত আসন

জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা নিয়ে জটিলতার কেন্দ্রে ছিল অবশিষ্ট সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ। শুনানি শেষে গতকাল বুধবার সুন্নি ইত্তেহাদকে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দের আদেশের দিন ধার্য করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করে।

সংরক্ষিত আসন পেতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত বিজয়ী প্রার্থীরা সুন্নি ইত্তেহাদে যোগ দেন। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত মোট ২২৬টি নারী আসনের মধ্যে ৭৮টির বরাদ্দ স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন।

শুনানিতে পিটিআই নেতা ও দলটির আইনজীবী আলী জাফর বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের সরকার গঠন এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার রয়েছে। সুন্নি ইত্তেহাদ একটি নিবন্ধিত দল এবং তাদের নির্বাচনী প্রতীকও আছে। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যোগ দিলে সুন্নি ইত্তেহাদের সরকার গঠনের অধিকার আছে।
তবে পিটিআইয়ের বক্তব্যের বিরোধিতা করে পিএমএল-এন, পিপিপি ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)। তাদের যুক্তি, সংরক্ষিত আসন পেতে হলে একটি দলকে নির্বাচনে লড়তে হয় এবং কিছু আসন পেতে হয়।

একপর্যায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাঁদের কাছে একটি চিঠি আছে যেখানে সুন্নি ইত্তেহাদ নির্বাচন করতে চায় না এবং সংরক্ষিত আসন চায় না বলে দলটি জানিয়েছিল। জবাবে আলী জাফর বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে পিটিআই বলেছে, নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত নারী ও সংখ্যালঘু আসন ছিনিয়ে নেওয়ার নির্লজ্জ পরিকল্পনা করছে। বিষয়টিকে দলটি ‘জনরায় ছিনিয়ে নেওয়ার’ শামিল বলেও মন্তব্য করেছে।

জোট সরকার গঠনে আলোচনা

পাকিস্তানে কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বে ছয়দলীয় জোট কাজ করছে। ২ মার্চের মধ্যেই এ সরকার গঠিত হতে পারে।

৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও চারটি প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। সাধারণ পরিষদের ২৬৪টি আসনে ভোট হয়। এতে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৯০ আসনে জয় পান। তবে ৭৯ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা পিএমএল-এন আর ৫৪ আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা পিপিপি ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে কেন্দ্রে ও প্রদেশগুলোতে সরকার গঠন করছে।

পিএমএল-এন ও পিপিপির সমঝোতা অনুযায়ী পিএমএল-এনের নেতা শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আর পিপিপির নেতা আসিফ আলী জারদারি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। এ ছাড়া জোট সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয় পাবে—এ নিয়ে গতকাল জোটের বৈঠক ডাকা হয়। পাশাপাশি দলের পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকও ডাকে পিএমএল-এন।

আইএমএফকে চিঠি ইমরানের

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) চিঠি লিখেছেন পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা কারাবন্দী ইমরান খান। চিঠিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেওয়া ঋণের বাকি কিস্তিগুলো ছাড়ের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দলের সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

যথাসময়ে চিঠির পুরো বিষয়বস্তু জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলে দলের জ্যেষ্ঠ এই দুটি সূত্র জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চিঠি হাতে পায়নি বলে এক ই-মেইলের জবাবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে আইএমএফ।

খেলাপি হওয়া এড়াতে পাকিস্তানের জন্য গত বছর ৩০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা কর্মসূচি অনুমোদন করে আইএমএফ। আগামী মাসে এই ঋণের সবচেয়ে বড় কিস্তি পাওয়ার কথা, যা নতুন সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।