মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু

ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিরোধীদের চাপের মুখে মুইজ্জু

ভারতের বিরোধিতা করে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। দেশের দুই প্রধান বিরোধী দল তাঁকে সাবধান করে বলেছে, অত্যধিক ভারতবিরোধিতা দেশকে গুরুতর বিপদের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। বদল ঘটাতে পারে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে।

চীনের একটি যুদ্ধজাহাজকে মালদ্বীপে নোঙর করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদ্বীপ সরকার। সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুই দিনের মাথায় দুই বিরোধী দলের এই হুঁশিয়ারি দ্বীপরাষ্ট্রের রাজনীতিকে চনমনে করে তুলেছে। নিজের দেশেই বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে। ওই দুই দলের নেতারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের এই মনোভাবের ফলে আখেরে মালদ্বীপেরই ক্ষতি হবে।

মুইজ্জুর সমালোচনাকারী দুই বিরোধী দলের একটি ‘মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি), অন্যটি ‘দ্য ডেমোক্র্যাট’। ৮০ সদস্যবিশিষ্ট (আগে মোট আসন ছিল ৮৭) মালদ্বীপের পার্লামেন্ট বা আইনসভায়, যাকে সে দেশে ‘মজলিশ’ বলা হয়—দুই দলের সদস্যসংখ্যা ৫৫। রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ‘পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস’ (পিএনসি) দলের মোহাম্মদ মুইজ্জু। এই পদে তিনি নির্বাচনে লড়েন প্রবল ভারতবিরোধিতাকে হাতিয়ার করে। জয়ী হয়েই তিনি ভারতবিরোধী ভূমিকায় নামেন। তা করতে গিয়ে খোলাখুলিভাবে চীনপন্থী হিসেবেও পরিচিতি পান।

চীনের যুদ্ধজাহাজ ‘শিয়াং ইয়াং হং–৩’–কে মালে বন্দরে নোঙর করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুইজ্জু। তারপরই এই দুই দল সরাসরি তাঁর সিদ্ধান্তদের বিরোধিতা করে। শুধু ওই দুই দলই নয়, মালদ্বীপের জনগণের এক বড় অংশও মনে করছে, অত্যধিক ভারতবিরোধিতা সে দেশের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। দেশকে বিপদের মুখে দাঁড় করাবে।

‘শিয়াং ইয়াং হং–৩’ যুদ্ধজাহাজটি দক্ষিণ চীন সাগর পেরিয়ে আপাতত ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও জাভার মধ্যবর্তী সুন্দা প্রণালিতে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তার মালে পৌঁছানোর কথা। আগে ঠিক ছিল, কলম্বোতে সেটা নোঙর করবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আপত্তির কারণে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে তা নাকচ করে দিয়েছেন। আগামী এক বছর চীনের কোনো যুদ্ধজাহাজ শ্রীলঙ্কায় নোঙর করতে পারবে না।

এরপরই মুইজ্জু ওই যুদ্ধজাহাজকে মালেতে আসার অনুমতি দেন। যদিও তাঁর সরকার জানিয়েছে, ওই জাহাজ সামরিক কোনো গবেষণার কাজে যুক্ত নয়। তারা নোঙর করবে লোকবল বদলাতে ও রসদসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য। জাহাজটি শান্তিপূর্ণ সমুদ্র গবেষণার সঙ্গে যুক্ত।

এমডিপির চেয়ারম্যান ফৈয়াজ ইসমাইল, মজলিশের ডেপুটি স্পিকার আহমেদ সালিম, ডেমোক্র্যাট দলের সভাপতি হাসান লতিফ ও সংসদীয় দলের নেতা আলি আজিম রাজধানী মালেতে একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, দুই দলই বিশ্বাস করে, উন্নয়নের সহযোগী বন্ধুকে উপেক্ষা করা, দূরে সরিয়ে রাখা দেশের জন্য ক্ষতিকর। আরও ক্ষতিকর এই কারণে যে সেই বন্ধুদেশের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষিত। দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পক্ষেও এই সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর।

বিরোধী নেতারা এ কথাও বলেন, এতকাল ধরে দেশের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি হলো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এমন বন্ধু দেশকে সঙ্গে রাখা। একযোগে পথচলা। দুই দলই ভারতকে ‘সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুদেশ’ বলে মনে করে। সংবাদ সম্মেলনে দুই দলের নেতারাই বলেছেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা মালদ্বীপের স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।

মুইজ্জু ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রথমেই তিনি জানিয়ে দেন, মালদ্বীপে অবস্থানকারী ৮৮ ভারতীয় সেনাকে দেশে ফিরে যেতে হবে। সে জন্য তাঁর সরকার ১৫ মার্চ সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছে। মালদ্বীপকে ভারত দুটি হেলিকপ্টার ও একটি ছোট বিমান উপহার দিয়েছিল। সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে ওই সেনাদের থাকা। সেনা সরে গেলে ওই বিমান ও হেলিকপ্টারের হাল কী হবে, তা এখনো অজানা। ওই সিদ্ধান্তের পরেই চীনা যুদ্ধজাহাজকে নোঙরের অনুমতি।

সেনা অপসারণ নিয়ে ভারত এখনো সরাসরি কিছু বলেনি। শুধু এটুকু জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। যুদ্ধজাহাজ নোঙর করা নিয়ে ভারত চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। সেই উদ্বেগের কথা মালদ্বীপকে নানাভাবে বুঝিয়েও দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দুই বিরোধী দলের ভূমিকা ভারতের কাছে স্বস্তিদায়ক। ভারত দেখতে চাইছে, অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে সে দেশের জনগণ সরকারের ভারতবিরোধিতার বিরুদ্ধে কতটা সরব হয়।