নীতি পুলিশের হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে
নীতি পুলিশের হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে

ইরানে দমন–পীড়নের নিন্দা জানালেন খামেনির বোন

ইরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমানির মৃত্যু ঘিরে কয়েক মাসের বিক্ষোভে দমন–পীড়ন চালানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বোন বাদরি হোসেইনি খামেনি। দেশবাসীর উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে তিনি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রতি বিক্ষোভকারীদের দিকে তাক করা অস্ত্র নামিয়ে ফেলার আহ্বান জানান। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।

চিঠিতে বাদরি হোসেইনি খামেনি লেখেন, ‘বিক্ষোভে সন্তান হারানো মায়েদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি মনে করি, চলমান বিক্ষোভ দমাতে আমার ভাইয়ের নেওয়া পদক্ষেপ যে যথাযথ নয়, সেটা জানানোর এটাই প্রকৃত সময়। রেভলু৵শনারি গার্ডের প্রতি আমার আহ্বান, অস্ত্র নামিয়ে রাখুন এবং দ্রুত সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিন।’ চিঠিটি আজ বুধবার টুইটারে শেয়ার করেছেন বাদরি হোসেইনি খামেনির ছেলে মাহমুদ মোরাদখানি।

এর আগে বিক্ষোভে দমন–পীড়নের প্রতিবাদে বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি ইরানকে বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ভাগনি এবং প্রখ্যাত অধিকারকর্মী ও প্রকৌশলী ফরিদেহ মোরাদখানি। গত ২৩ নভেম্বর ইরানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ফরিদেহ মোরাদখানি। এরপর তাঁর একটি ভিডিও বিবৃতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংবাদ সংস্থা এইচআরএএনএ পরে সেই ভিডিও প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে মোরাদখানি বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘মুক্ত মানুষেরা, আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং আপনাদের সরকারকে একটি খুনি ও শিশু হত্যাকারী শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকতে বলুন।’

ইরান সরকার সম্পর্কে ফরিদেহ মোরাদখানি আরও বলেন, ‘তারা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। তারা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখা ছাড়া আর কিছুই জানে না।’

ফ্রান্সে বসবাস করেন ফরিদেহ মোরাদখানির ভাই মাহমুদ মোরাদখানি। তিনিও একজন অধিকারকর্মী। ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থার কট্টর সমালোচক তিনি। মাহমুদ তাঁর বোনের ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করেছেন। জানিয়েছেন, তাঁর বোন এখন তেহরানে পুলিশের হেফাজতে আছেন। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে এক দফা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ফরিদেহ মোরাদখানি। পরে জামিন পান তিনি। এখন আবার গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁকে তেহরানের এভিন কারাগারে রাখা হয়েছে।

এদিকে আজ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তেহরান ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সেখানকার শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে দাঙ্গার পরিবেশে পরিণত হতে না দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁরা দাঙ্গাবাজ। নিশ্চয়ই আপনারা বিক্ষোভকারী ও দাঙ্গাবাজের তফাত বোঝেন।’

গত ১৬ সেপ্টেম্বর নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির। সঠিকভাবে হিজাব না পরায় মাসাকে আটক করেছিল নীতি পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তুমুল বিক্ষোভ। দাবি ওঠে হিজাব আইন বদলে ফেলার। বিক্ষোভ রুখতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কয়েক মাসের বিক্ষোভে ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ৪০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৬ হাজার ৮০০ জনের বেশি। ইরান সরকারের ভাষ্যে, নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক। ইরানের অভিনেতা-অভিনেত্রী, ক্রীড়াবিদসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি ইতিমধ্যে বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন। বিক্ষোভের মুখে কঠোর হিজাব আইনে পরিবর্তন আনার আভাস দিয়েছে ইরান সরকার।