হংকংয়ের গ্রেপ্তার হওয়া ৪৭ গণতন্ত্রপন্থী কর্মীর কয়েকজনকে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ৪ মার্চ, ২০২১
হংকংয়ের গ্রেপ্তার হওয়া ৪৭ গণতন্ত্রপন্থী কর্মীর কয়েকজনকে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ৪ মার্চ, ২০২১

হংকংয়ে ‘নাশকতার’ অভিযোগে ১৪ গণতন্ত্রপন্থী দোষী সাব্যস্ত, হতে পারে যাবজ্জীবন

হংকংয়ে ‘নাশকতার’ অভিযোগে ১৪ গণতন্ত্রপন্থী কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন সেখানকার একটি আদালত। বেইজিংয়ের চাপিয়ে দেওয়া এক কঠোর আইনের আওতায় আজ বৃহস্পতিবার এ ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এ ছাড়া অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে দুজনকে।

চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে এ আইন সরকারবিরোধীদের দমনে প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের।

হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক মামলায় ৪৭ জন গণতন্ত্রপন্থী কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁদের মধ্য থেকেই আদালত আজ ওই কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করলেন।

যাঁদের দোষী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনপ্রণেতা লিউং কক–হাং, ল্যাম চিউক–টিং, হেলেনা ওং ও রেমন্ড চ্যাং। তিন বিচারক মামলার আদেশে সাবেক ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলর লি ইউ–শান ও লরেন্স লাউকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

যাঁদের দোষী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনপ্রণেতা লিউং কক-হাং, ল্যাম চিউক-টিং, হেলেনা ওং ও রেমন্ড চ্যাং। তিন বিচারক মামলার আদেশে সাবেক ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলর লি ইউ-শান ও লরেন্স লাউকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়া কর্মীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

দোষী সাব্যস্ত হওয়া কর্মীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
মামলায় ৩১ গণতন্ত্রপন্থী কর্মী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তাঁদের তুলনামূলক কম মেয়াদে কারাদণ্ড হতে পারে। তাঁদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে পরবর্তী কোনো এক দিন। অপর ১৬ জন অপরাধের কথা অস্বীকার করেছেন।

হংকংয়ে এক অনানুষ্ঠানিক প্রাইমারি নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে ২০২১ সাল থেকে ৪৭ গণতন্ত্রপন্থী কর্মীর বিচার চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে হংকংয়ের সরকারকে অচল করে দেওয়া ও এ নগরীর শীর্ষ নেতাকে উৎখাত করার চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় এ আদেশ বিরোধী রাজনীতিকদের দমনে কঠোর নিরাপত্তা আইনকে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি তুলে ধরেছে। ২০১৯ সালে হংকংয়ে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এর পর থেকে সেখানে গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে দমন–পীড়নের ঘটনা বেড়ে গেছে।

তবে বেইজিং ও হংকংয়ের সরকার জোর দিয়ে বলছে, এ আইনের সহায়তায় নগরীতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয় হংকংকে। এতে এ নগরী বড় ধরনের রাজনৈতিক পরীক্ষার মুখে পড়ে। তখন অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন, ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে আলাদা হওয়া পুঁজিবাদী হংকং কমিউনিস্ট চীনা শাসনের অধীনে কেমন থাকবে।

বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। ২০১৯ সাল

সেই উদ্বেগ কিছুটা প্রশমিত হয়েছিল বেইজিংয়ের  প্রতিশ্রুতিতে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী হংকংয়ে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা নীতি’ বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এর আওতায় হস্তান্তরের ৫০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০৪৭ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটিতে ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন, অবাধ ব্যক্তি অধিকার ও বিচারিক স্বাধীনতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছিল চীন।

যাহোক, ২০১৯ সালে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের পরের বছর ২০২০ সালে হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারি করা হয়। এ আইনের অধীন জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার নামে হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও সভা–সমাবেশকে ভীষণভাবে সীমিত করছে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেক কর্মীকে। চুপ থাকতে বা নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে অনেককে। এ ছাড়া ভেঙে দেওয়া হয়েছে কয়েক ডজন নাগরিক সংগঠন।