অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ছিল ভিন্ন। দুই দেশেরই অভিন্ন প্রতিপক্ষ চীনকে মোকাবিলার বিষয়টি সফরে বেশি আলোচনায় এসেছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ চার দিনের ভারত সফর শেষ করেছেন। তিনি ৮ থেকে ১১ মার্চ ভারত সফর করেন। সফরের প্রথম দিন তিনি আহমেদাবাদে মহাত্মা গান্ধীর বাসস্থান সবরমতি আশ্রম পরিদর্শন করেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভারত-অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ ও শেষ ক্রিকেট ম্যাচের উদ্বোধন করেন। মুম্বাই ও নয়াদিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে তাঁর সফর শেষ হয়।
১৯৫০ সালে অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রবার্ট মেঞ্জিস প্রথমবারের মতো ভারত সফর করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় সফরে অস্ট্রেলিয়া যান। এরপর গভর্নর জেনারেল থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেছেন। ফলে বিগত ৭০ বছরে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক ধীরগতিতে হলেও শক্তিশালী হচ্ছে।
আলবানিজের এই সফর আগের যেকোনো সফরের চেয়ে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। আগে দুই দেশের নেতারা নানা উদ্দেশ্যে পরস্পরের দেশ সফর করলেও চীনকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোকাবিলার বিষয়টি তখন কোনো নেতার মাথায় ছিল না। চীন তখনো আজকের মতো অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে এতটা শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়নি। তখন নেতাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। সর্বশেষ এই সফরেও অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক বা অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার মূল উদ্দেশ্য, চীনের ওপর থেকে তার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি ও প্রভাবকে মোকাবিলা।
২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে চীনের জাতীয়তাবাদী আগ্রাসী আচরণে অস্ট্রেলিয়াকে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্যে ভারতও উদ্বিগ্ন। চীনকে নিয়ে দুই দেশের উদ্বেগের ফলে ২০০৯ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। ওই বছর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড ভারত সফর করেন। ওই সময় দুই দেশের মধ্যে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর অস্ট্রেলিয়া ভারতে ইউরেনিয়াম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের প্রতি তার পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করে। শুধু তা-ই নয়, উন্নত প্রকৌশলীর মাধ্যমে সহায়তা দিতে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ফলে চীনকে মোকাবিলার অভিন্ন লক্ষ্য এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি বেশ জটিল হয়ে উঠছে। একই অঞ্চলের দুটি দেশ ভারত ও চীন বিশ্বমঞ্চে পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চায়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ইতিহাসে এ ধরনের পরিস্থিতি কখনো সৃষ্টি হয়নি। ইতিহাসের নিয়ম হচ্ছে, যে অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক থেকে চালকের আসনে থাকে, সেই অঞ্চল রাজনীতি ও সামরিক দিক থেকে অন্যান্য অঞ্চলের ওপর প্রভুত্ব বজায় রাখে। ভারত ও চীন অর্থনৈতিক দিক থেকে পরাশক্তিতে পরিণত হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে চীন পৃথিবীর দ্বিতীয় হলেও আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশটি সবার শীর্ষে উঠে যেতে পারে।
অন্যদিকে ভারত এখন পঞ্চম স্থানে থাকলেও তার অর্থনীতির বিকাশ ঘটছে দ্রুতগতিতে। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে। বিগত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারত দুটি আদর্শ অনুসরণ করেছে। একটি কৌটিল্যের আগ্রাসী নীতি, অন্যটি সম্রাট অশোকের শান্তির নীতি। প্রাচীন ইতিহাসপর্বে ভারত নানা মাত্রায় প্রথম নীতি প্রয়োগ করলেও স্বাধীন দেশ হিসেবে ১৯৪৭ সাল থেকে দেশটি অশোকের শান্তির নীতি অনুসরণে ব্রত হয়।
এই নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধ বা শক্তি প্রয়োগের বদলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, যেকোনো বিরোধের কূটনৈতিক সমাধান এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু স্ফুলিঙ্গহীন এই নীতি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতকে কোনো সুবিধা দেয়নি। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এই নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, তারপর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির কারণে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি কৌটিল্যের আগ্রাসী নীতিতে ফিরে যায়। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া মাঝারি শক্তিসম্পন্ন দেশ। তার জাতীয় নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৯৫২ সালে স্বাক্ষরিত অ্যাঞ্জাস (ANZUS) চুক্তির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক শক্তি আপেক্ষিক অর্থে ক্ষয়িষ্ণু। চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি মোকাবিলায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রধান মিত্র হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।
নিঃসন্দেহে ভারতের চমকপ্রদ অর্থনৈতিক অগ্রগতি দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পেছনে অন্যতম উদ্দীপক হিসেবে কাজ করছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ভারতে বিশাল আকারের অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি হয়েছে। গড়ে উঠেছে ব্যক্তিমালিকানায় বড় বড় কোম্পানি। ফোর্বসের বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ১২টি ভারতীয় কোম্পানির নাম রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের কারণে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন এসেছে। গড়ে উঠেছে বিশাল আকারের মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাদের ক্রয়ক্ষমতা যেকোনো উন্নত ইউরোপীয় দেশকে হার মানায়। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার আজ ৭ শতাংশ। তবে এর চেয়ে বড় কথা, ভবিষ্যতে দেশটির অর্থনীতি বিকাশের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি। ভারত তার অর্থনৈতিক শক্তিকে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে রূপান্তর করতে চায়।
১৯৪১ সালে দুই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। সেই বছর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে ভারতের একটি বাণিজ্য অফিস খোলা হয়। পরবর্তী সময়ে সেটি ভারতের কনস্যুলেট অফিসে পরিণত হয়। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অস্ট্রেলিয়া-ভারত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তি (ইসিটিএ) ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য শ্রম, উচ্চশিক্ষা ও পর্যটনকে বৃদ্ধি করা। ওই চুক্তির আওতায় ৮৫ শতাংশ ভারতীয় পণ্য আমদানি-রপ্তানির ওপর থেকে শুল্ক রেহাই পাবে। এই হিসাব ১০০ ভাগ পৌঁছানোর কথা। ভারত অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ বৃহৎ বাণিজ্যের দেশ এবং উচ্চশিক্ষার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয়দের সংখ্যা নেহাত কম নয় এবং সেই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
ভারত অনেক আগে থেকেই চীনের সঙ্গে তার প্রতিরক্ষা নিয়ে সমস্যায় ছিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পেলেও ভারতের উত্তর সীমান্তরেখা অমীমাংসিত থেকে যায়। এই সমস্যা আরও ঘনীভূত হয় চীন যখন তিব্বত দখল করে নেয়। এরপর ১৯৬২ সালের সংঘর্ষ, ১৯৮৬-৮৭ সালের উত্তেজনা এবং সর্বশেষ ২০২০ সালের সীমান্ত সংঘর্ষ উল্লেখ করার মতো।
চীনের আগ্রাসী নীতি মোকাবিলায় ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৯৭২ সালে এক চুক্তিবলে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ভারত উন্নত মানের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পায়। সেই সঙ্গে আসে মস্কোর কূটনৈতিক সমর্থন। ১৯৯৮ সালে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক অগ্রগতি ঠেকাতে ভারত পারমাণবিক শক্তির বিকাশের স্বাধীনতা পায়। এরপর ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া কোয়াডে (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চারটি দেশের জোট) অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়া ভারত মহাসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জের ভারতীয় এবং মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
সামরিক দিক থেকে যদি বিচার করি, তাহলে ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। তার উদাহরণ হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ২০০৬ সালের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতাসংক্রান্ত স্মারক, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসংক্রান্ত ২০০৯ সালের যৌথ ঘোষণা এবং ২০২০ সালে ‘সর্বব্যাপী কৌশলগত বন্ধুত্ব’।
অস্ট্রেলিয়া ভারতের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে, যাকে ইংরেজিতে অসিইনডেক্স বলে। ইতিমধ্যে তারা ১০টি যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় ডারউইন শহরে ভারত একটি পি-৮ নজরদারি বিমান মোতায়েন করেছে। ওই শহরের গুরুত্ব হচ্ছে, সেখানে আড়াই হাজার মার্কিন মেরিন অবস্থান করছে। তারা অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে নানা ধরনের প্রশিক্ষণে যুক্ত আছে। চীনের সামরিক অগ্রগতির ওপর নজর রাখতেই ডারউইনে মার্কিন মেরিন সেনারা অবস্থান করছেন।
কোয়াড নামের এই জোট ২০০৪ সালে গঠন করা হয়েছিল। এটি অনেক বছর নিষ্ক্রিয় ছিল। সে সময় চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে অস্ট্রেলিয়া কোনো সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি। ২০১৭ সালে আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ২০২১ সালে এই জোট প্রথমবারের মতো শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেয়। চীন একে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ন্যাটো হিসেবে আখ্যায়িত করে সমালোচনা করে। অদূর ভবিষ্যতে এতে আরও যোগ দিতে পারে নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনাম।
শিগগিরই অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ‘মালাবার’ নামে নৌ মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নৌ মহড়া হবে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের নিকটবর্তী সমুদ্র উপকূলে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ বছরের আগস্টে অনুষ্ঠেয় এই নৌ মহড়ায় ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মুম্বাইয়ে আলবানিজের ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ সাবমেরিন পরিদর্শনকে পর্যবেক্ষকেরা বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।
পরোক্ষভাবে বাংলাদেশও কোয়াড জোট নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র দেশগুলোর জন্য একটা জটিল অবস্থা দেখা দিয়েছে। এ ধরনের জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়া, নাকি জোট রাজনীতি থেকে দূরে থাকা উচিত, সেটা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। চীন কোয়াড জোটের ব্যাপারে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কৌশলের দিক থেকে বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে চীন বাংলাদেশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে। বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশ ও ভারত এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে চীন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সম্ভবত এসব ভেবে ২০২১ সালের ১০ মে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন চীনের রাষ্ট্রদূত ঢাকাকে সতর্ক করেছিল। অবশ্য চীনকে আশ্বস্ত করে বাংলাদেশ বলেছে, জোট নিরপেক্ষ রাজনীতিতে বাংলাদেশ সব সময় বিশ্বাস করে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ যথেষ্ট কৌশলী অবস্থান নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পেরেছে।
তবে এটাও ঠিক, ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক একেবারে মসৃণ বলা কঠিন। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ভারতে শিশুশ্রম। বিষয়টিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মোদির সামনে তুলে ধরেছেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত রাশিয়ার কোনো সমালোচনা করেনি। এটা সম্ভবত এ কারণে হতে পারে যে রাশিয়া থেকে ভারত ৭৫ শতাংশ অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনে থাকে। রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেল ভারতের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের রয়েছে নানা চুক্তি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিআরআইসিএস, যা ব্রিক্স হিসেবে পরিচিত। এতে অন্তর্ভুক্ত রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল। এই আঁতাত পশ্চিমা উন্নত দেশের বিকল্প একটি গোষ্ঠী। তবে এসব সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যত দিন না চীন দুই দেশেরই প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
● বদরুল আলম খান অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনি, অস্ট্রেলিয়া