ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে

ফিলিপাইনে মাদকবিরোধী যুদ্ধের সব দায় নিলেন দুতার্তে

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে বলেছেন, তাঁর প্রশাসনের ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ সম্পূর্ণ দায়ভার তিনি গ্রহণ করছেন।

দুতার্তের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট।

মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানার আওতায় গত মঙ্গলবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একই দিন দুতার্তেকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আইসিসির উদ্দেশে পাঠানো হয়। ৭৯ বছর বয়সী দুতার্তে এখন এই আদালতে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।

দুতার্তে কয়েক দফায় ফিলিপাইনের দাভাওয়ের সিটি মেয়র ছিলেন। পরে তিনি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। দুতার্তে মেয়র ও প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। কথিত এই মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে বহু মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়।

প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে তদন্ত করে আইসিসি। এই তদন্তের আলোতে আইসিসি দুতার্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আইসিসির পরোয়ানা মেনে গত মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। হংকং থেকে সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে ম্যানিলা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরই গ্রেপ্তার হন দুতার্তে।

গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মাথায় মঙ্গলবার রাতেই দ্য হেগগামী একটি উড়োজাহাজে দুর্তাতেকে তুলে দেওয়া হয়। দুতার্তে দ্য হেগে পৌঁছানোর পর গতকাল বুধবার তাঁকে হেফাজতে নিয়েছেন আইসিসি।

গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় দুতার্তেকে দ্য হেগগামী উড়োজাহাজে তুলে দেওয়ার পর এই প্রথম তিনি কোনো বার্তা দিলেন।

দুই মিনিটের একটু বেশি সময়ের ভিডিও বার্তায় দুর্তাতে বলেন, ‘অতীতে যা-ই ঘটুক না কেন, আমি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সামনে থাকব। আমি আগেই বলেছি, আমি আপনাদের রক্ষা করব এবং আমি সবকিছুর জন্য দায়ী থাকব।’

দুতার্তের ভিডিও বার্তাটি ইতিমধ্যে এক কোটিবার দেখা হয়ে গেছে। ভিডিওতে শুধু দুতার্তেকেই কথা বলতে দেখা যায়। তাঁর পরনে ছিল সাদা রঙের একটি জামা।

দেখে মনে হয়েছে, উড়োজাহাজের ভেতরে ভিডিওটি ধারণ করা। ভিডিওতে তাঁর কথা বলার সময় ইঞ্জিনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।

দুতার্তেকে নিয়ে আইসিসি একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুতার্তে আইসিসির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। মানুষ হত্যার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

দুতার্তেকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দ্য হেগের আইসিসির বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। তাঁকে নেদারল্যান্ডসের একটি বন্দিশালায় রাখা হয়েছে।

ভিডিও বার্তায় দুতার্তে তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমি ঠিক আছি, চিন্তা করবেন না।’

দুতার্তে আরও বলেন, ‘এটা একটা দীর্ঘ আইনিপ্রক্রিয়া হবে। তবে আমি আপনাদের বলছি, আমি আমার দেশের জন্য কাজ করে যাব এবং যদি এটাই আমার নিয়তি হয়, তবে তা–ই হোক।’

দুতার্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে (২০১৬-২০২২ সাল) মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে তিনি ‘ডেথ স্কোয়াড’ গঠন ও পরিচালনা করেছিলেন। এভাবে বহু মানুষ হত্যার মাধ্যমে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।

এশিয়ার দেশগুলোর সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে দুতার্তেই প্রথম আইসিসিতে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।

আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় বলা হয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুতার্তে কথিত মাদক ব্যবহারকারী ও মাদক কারবারিদের হত্যা করতে ডেথ স্কোয়াড গঠন করেন। অর্থায়ন করেন। অস্ত্রের জোগান দেন।

পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুতার্তের ছয় বছরের শাসনামলে ফিলিপাইনে মাদকবিরোধী অভিযানে ৬ হাজার ২০০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।

দুতার্তের মেয়ে সারা দুতার্তে ফিলিপাইনের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দ্য হেগে পৌঁছেছেন বলে তাঁর কার্যালয় থেকে জানানো হয়।

আইনজীবী ও শিক্ষাবিদেরা বলছেন, দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করে দ্য হেগে নিয়ে যাওয়াটা আইসিসির জন্য একটি বড় ঘটনা।

আইসিসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আছে। তা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করার জন্য এই আদালতের নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দুতার্তের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ওয়াশিংটন অবগত।