রনিল-দুলাস যে-ই আসুন, পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে না

শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে
 ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষেদের সরকার উৎখাতে মাঠে নেমেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে গদি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা দুই ভাই গোতাবায়া ও মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তবে রাজনীতির মারপ্যাঁচে এখন তাঁদের সরকারের এক মন্ত্রীরই প্রেসিডেন্ট পদে বসার সম্ভাবনা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

আজ বুধবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে নতুন প্রেসিডেন্ট পদে ভোট দেবেন আইনপ্রণেতারা। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে, রাজাপক্ষেদের দল শ্রীলঙ্কা পদুজনা পেরামুনার (এসএলপিপি) নেতা দুলাস আলহাপেরুমা এবং বামপন্থী দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) নেতা অনুঢ়া কুমারা দিসানায়েকে।

শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট ঘিরে বিক্ষোভ

এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়েগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা প্রার্থী হলেও তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। মূলত দুলাস আলহাপেরুমাকে সমর্থন জুগিয়ে রনিল বিক্রমাসিংহেকে পরাজিত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ইউএনপির নেতৃত্ব সাজিথের হাতে দিতে গড়িমসি করেছিলেন রনিল। শেষ মুহূর্তে তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন। সেই দ্বন্দ্বের জেরে ইউএনপি ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন সাজিথ প্রেমাদাসা। এখন তিনি সেটারই শোধ নিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গোতাবায়া রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়ায় এই নির্বাচন হচ্ছে। তাঁর সরকারের তথ্য ও গণমাধ্যমমন্ত্রী দুলাস আলহাপেরুমার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন সাজিথ প্রেমাদাসা। তাঁর দ্বিতীয় সমর্থক হিসেবে রয়েছেন ওই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গামিনি লক্ষ্মণ পেইরিস।

রনিল বিক্রমাসিংহের মনোনয়নে রয়েছেন রাজাপক্ষেদের দলের মন্ত্রী ও ‘লিডার অব দ্য হাউস’ দিনেশ গুনাবর্ধনে। এই দলের আরেক মন্ত্রী মানুশা নানায়াক্করারাও রয়েছেন তাঁর মনোনয়নে। গত মে মাসে বিক্ষোভের মুখে মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভবন ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর রনিলকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। সে সময়ও রাজাপক্ষদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হতো রনিল বিক্রমাসিংহেকে। ১৪ জুলাই গোতাবায়া প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর সংবিধান অনুসারে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেভিপি নেতা অনুঢ়া কুমারা দিসানায়েকে তাঁর দলের নেতাদের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে পার্লামেন্টে গোপন ব্যালটের ভোটে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা খুব একটা নেই। শ্রীলঙ্কায় জেভিপির সহিংস রক্তপাতের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭১ ও ১৯৮৮ সালে দুবার তারা সশস্ত্রভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়। তাদের উভয় চেষ্টায় ছিল ব্যাপক সশস্ত্র হঠকারিতা ও সহিংসতা। এই দুই ঘটনায় হাজারো তরুণের প্রাণ যায়। পরে রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকারের দমনপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল তারা।

রনিল বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে এখন রাজাপক্ষেদের সঙ্গে আঁতাত করার অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর নিয়োগকেও দেখা হচ্ছে গণতন্ত্রের লঙ্ঘন হিসেবে। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকা বামপন্থী দল ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টির (এফএসপি) নেতা কুমার গুনারত্নে ক্ষমতা থেকে রনিল বিক্রমাসিংহের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রনিল বা দুলাস যে-ই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না কেন, তাতে পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে মনে হচ্ছে না।