তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত সোমবারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপে কেউ এখনো জীবিত রয়েছে কি না, তা বের করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। ভূমিকম্পের ১০০ ঘণ্টা পার হলেও এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বেশ কিছু মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। খবর আল-জাজিরার
এর মধ্যে ভূমিকম্পের ১০৪ ঘণ্টা পর আজ শুক্রবার তুরস্কের কিরিখান শহর থেকে ৪০ বছর বয়সী জয়নেপ কাহরামানকে উদ্ধার করা হয়েছে। আদিয়ামান প্রদেশে উদ্ধার হয়েছেন ৬০ বছর বয়সী ইয়ুপ একে। এর আগে গাজিয়ানতেপের ইসলাহায়ে জেলায় ৬৬ বছর বয়সী মুরাত ভুরালকে উদ্ধার করা হয়। আজারবাইজারের উদ্ধারকারী দল কাহরামানমারাসে উদ্ধার করে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে।
ভূমিকম্পের ১০০ ঘণ্টা পর কাহরামানমারাস ও হায়াতে এলাকা থেকে আরও মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০১তম ঘণ্টায় এক স্থান থেকে ছয়জনকে উদ্ধার করা হয়। তাঁরা পরস্পর আত্মীয়। একটি ছোট জায়গায় কোনোমতে আটকে ছিলেন তাঁরা। হায়াতে এলাকায় এক মা ও তাঁর ১০ বছর বয়সী শিশুকেও উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ায় দ্রুত সহায়তা পাঠাচ্ছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ভূমিকম্পের পরপরই সহায়তার হাত বাড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ১৯টি দেশ থেকে ২৭টি উদ্ধার ও অনুসন্ধান দল গঠন করে পাঠানো হয়েছে। এ দলে ১ হাজার ১৫০ জন সদস্য ও ৭০টি কুকুর পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সহায়তা পাঠানো হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার তুরস্কে পৌঁছে যায় চীনের উদ্ধারকারী দল। এ ছাড়া চীনের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৬২ কোটি টাকা (৫৯ মিলিয়ন ডলার) পাঠানো হয়। দেশটির পক্ষ থেকে সিরিয়াতেও সহায়তা পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তাঁর দেশ থেকে ৭৭ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞ নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে তুরস্কের গাজিয়ানতেপে কাজ করছেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টর সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সিরিয়ার অবস্থা নিয়ে তিনি উদ্বেগে রয়েছেন। সেখানেও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় জরুরি উদ্ধারকাজে সাড়া দেওয়া আরেকটি দেশ হচ্ছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দেশেই উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সিরিয়ায় ৩০০ সেনা উদ্ধারকাজে সহায়তা করছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘের দল মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে বাংলাদেশ, ভারত, ইউক্রেন, জার্মানি, গ্রিস, ইসরায়েল, ইরান, জাপান, নরওয়ে, স্পেনের মতো দেশও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুরস্ককে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও। তুরস্কে ১০ হাজার ভ্রাম্যমাণ বাড়ি পাঠাচ্ছে কাতার। এ ছাড়া একটি ফিল্ড হাসপাতালের সরঞ্জাম এবং মানবিক সহায়তাও পাঠাচ্ছে কাতার। মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটা সিরিয়া ও তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় কাতারের প্রচেষ্টার অংশ।