যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লসের বক্তব্য শেষ হতেই চিৎকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন লিদিয়া থর্প নামের এই সিনেটর। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট হাউস, ক্যানবেরা
যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লসের বক্তব্য শেষ হতেই চিৎকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন লিদিয়া থর্প নামের এই সিনেটর। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট হাউস, ক্যানবেরা

আপনাকে রাজা মানি না, চার্লসের সামনে বললেন অস্ট্রেলীয় সিনেটর

অস্ট্রেলিয়া সফরে আছেন যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লস। আজ সোমবার সেখানে পার্লামেন্ট হাউসে বক্তব্য দেন তিনি। আর এই বক্তব্য শেষ হতে না হতেই অস্ট্রেলিয়ার এক স্বতন্ত্র সিনেটর চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি আপনাকে রাজা মানি না।’

লিদিয়া থর্প নামের এই সিনেটর অস্ট্রেলিয়ার একজন আদিবাসী। তাঁকে সরিয়ে নেওয়ার আগে প্রায় মিনিটখানেক ধরে তিনি চিৎকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার মানুষকে’ গণহত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলতে থাকেন,‘এটি আপনার (চার্লস) দেশ নয়, আপনি আমার রাজা নন।’ এরপরই অবশ্য নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে দূরে সরিয়ে নেন।

তবে এ ঘটনা অনুষ্ঠানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। স্বাভাবিকভাবেই এটি শেষ হয়। এরপর রাজকীয় এই দম্পতি তাঁদের স্বাগত জানাতে বাইরে অপেক্ষারত শত শত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে এগিয়ে যান।

অস্ট্রেলিয়া কমনওয়েলথভুক্ত একটি দেশ। এসব দেশে যুক্তরাজ্যে রাজা আলংকারিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে সম্প্রতি রাজার এ ভূমিকা থাকা না–থাকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

থর্প ভিক্টোরিয়া রাজ্যের স্বতন্ত্র সিনেটর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়া সরকার ও দেশটির আদিবাসীদের মধ্যকার চুক্তির পক্ষে কথা বলে আসছেন যাচ্ছেন।

পার্লামেন্ট হাউসে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে রাজা চার্লস ও রানী ক্যামিলা

অস্ট্রেলিয়া হলো একমাত্র সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ, যেখানকার অনেক আদিবাসী এবং টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডারের লোকজন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তারা কখনো রাজার কাছে তাদের সার্বভৌমত্বের পরাজয় মেনে নেয়নি।

পরে থর্প বিবিসিকে বলেন, তিনি রাজাকে একটি ‘স্পষ্ট বার্তা’ দিতে চেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হতে হলে আপনাকে এই দেশের হতে হবে। কিন্তু তিনি এখানকার নন।’

আদিবাসী এই সিনেটর বলেন, রাজা চার্লসের উচিত এখানকার আদিবাসীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে পার্লামেন্টকে নির্দেশনা দেওয়া।

থর্প বলেন, ‘আমরা এতে নেতৃত্ব দিতে পারি, আমরা এটি করতে পারি, আমরা একটি উন্নত দেশ হতে পারি। কিন্তু আমরা সেই ঔপনিবেশিকের সামনে মাথা নত করতে পারি না, যার পূর্বপুরুষেরা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যার জন্য দায়ী।’

প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে থর্প ‘উপনিবেশবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এমনকি ২০২২ সালে সিনেটর হিসেবে শপথ নেওয়ার সময়ও তিনি শপথে সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন।

তবে প্রবীণ আদিবাসী আন্টি ভায়োলেট শেরিডান রাজা ও রানীকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি থর্পের প্রতিবাদকে ‘অসম্মানজনক’ উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি আমার পক্ষে কথা বলেন না।’

থর্পের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অনেকেই রাজকীয় এই দম্পতি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সকাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা হাতে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে জড়ো হয়েছেন। তবে এর বিপরীত দৃশ্যও ছিল। পার্লামেন্ট ভবনের সামনের লনে ভিন্নমতাদর্শের মানুষও জড়ো হয়েছিলেন।

রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই রাজা ও রানি ক্যানবেরায় পৌঁছান। এরপর লাইনে দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদ, স্কুলশিক্ষার্থী ও আদিবাসী জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন এনগুন্নাওয়াল এল্ডার আন্টি সেরেনা উইলিয়ামের সদস্যরা তাঁদের স্বাগত জানান। ক্যানবেরার পার্লামেন্ট হাউসের গ্রেট হলে তাঁদের ঐতিহ্যবাহী অভ্যর্থনা জানানো হয়। তবে থর্পের এ ধরনের আচরণ নিয়ে বাকিংহাম প্যালেস আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

পার্লামেন্ট হাউসে আসা খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাত মেলান চার্লস। পাশে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

অস্ট্রেলিয়া রাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে প্রজাতন্ত্র হবে কি না, তা নিয়ে কয়েক দশক ধরে বিতর্ক চলছে। এ নিয়ে ১৯৯৯ সালে একটি গণভোট হয়, যা দেশের সংবিধান পরিবর্তনের একমাত্র উপায়; কিন্তু গণভোটের রায় যায় রাজতন্ত্রের পক্ষে।