এমন অবিশ্বাস্য হারও মাহাথিরকে দেখতে হলো

মাহাথির মোহাম্মদ
ছবি: রয়টার্স

শেষবেলায় মাহাথির মোহাম্মদকে এমন দিনও দেখতে হলো! মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে নিজের আসনেই হেরেছেন দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। শুধু হেরেছেন তা নয়, ৯৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক তাঁর জামানতও হারিয়েছেন। মাহাথিরের এমন হারকে ‘বিস্ময়কর’ বলা হচ্ছে।

৫৩ বছরের মধ্যে এই প্রথম নিজের হার দেখলেন মাহাথির। এই হারের মধ্য দিয়ে তাঁর সাত দশকের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল শনিবার মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নিজের আসনে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হন মাহাথির। নির্বাচনে তাঁর দলেরও ভরাডুবি হয়েছে। তাঁর দল একটিও আসন পায়নি।

মাহাথিরের এই পরাজয় সম্পর্কে আল-জাজিরার ফ্লোরেন্স লুই বলেন, এটা একটা বড় বিস্ময়ের ব্যাপার যে তিনি শুধুই হারেনইনি, তিনি অবিশ্বাস্যভাবে হেরেছেন।

আল-জাজিরার দৃষ্টিতে, নির্বাচনে হারের পেছনে মাহাথিরের বয়স সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শেষ পর্যন্ত বয়সই যে তাঁর সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ছিল, তা প্রমাণিত।

অবশ্য নির্বাচনের আগেই মালয়েশিয়ার নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিজেট ওয়েলশ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছিলেন, ‘মাহাথিরের দিন শেষ।’

চিকিৎসক থেকে রাজনীতিতে মাহাথির হাতেখড়ি ১৯৪৬ সালে। তখন তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর। তিনি ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন। এই দলের হয়ে তিনি ১৯৬৪ সালে প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

মালয় সম্প্রদায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ১৯৬৯ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন মাহাথির। পার্লামেন্টের আসন হারান তিনি। ১৯৭০ সালে তাঁকে ইউএমএনওতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি ১৯৭২ সালে দলের সুপ্রিম কাউন্সিল পুনর্নির্বাচিত হন। মাহাথির ১৯৭৪ সালে পার্লামেন্ট সদস্য পুনর্নির্বাচিত হন। একই বছর তাঁকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

১৯৭৬ সালে মাহাথির উপপ্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮১ সালের জুনে তিনি ইউএমএনওর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একই বছরের জুলাইয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তারপর টানা ২২ বছর মাহাথির মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মাহাথির দেশকে রূপান্তরের কাজে নেমে পড়েন। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির পর প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়াকে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে দেন।

দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাকালে মালয়েশিয়াকে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেন মাহাথির। এই একটি কারণেই তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অনুকরণীয় রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হন। তাঁর উপাধি হয় ‘আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক’।

তবে মাহাথিরের এই উন্নয়ন সমালোচনার বাইরে ছিল না। বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ ওঠে মাহাথিরের বিরুদ্ধে। তাঁর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মাহাথির।

এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়েন মাহাথির। পরে নিজ দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা নাজিব রাজাককে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হটাতে মাহাথির অবসর ভেঙে ২০১৮ সালে আবার রাজনীতিতে ফেরেন।

একসময়ের রাজনৈতিক ‘শত্রু’ আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে জোট করেন তিনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে এই জোট জয়ী হলে ৯২ বছর বয়সে মাহাথির আবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। ক্ষমতাসীন জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাহাথির পদত্যাগ করেন।

গত অক্টোবরে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। ডাকা হয় আগাম নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়ে মাহাথির সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। ‘চমক’ ঠিকই এসেছে কিন্তু তা সবাইকে হতাশ ও হতবাক করে দিয়েছে। মাহাথিরকেও কি না জামানত হারাতে হয়!