পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় টহলদারি নিয়ে ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়ার কথা চীনও নিশ্চিত করল। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে এই বিষয়ে সমঝোতায় এসেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়াং গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, কিছুদিন ধরেই চীন-ভারত সীমান্তের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই দেশ কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে নিবিড় আলোচনা চালাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশ এক সমাধানে পৌঁছেছে। চীন তা ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করেছে। আগামী দিনে ওই সমাধান সূত্র রূপায়ণে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে। লিন জিয়াং অবশ্য এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
গতকাল সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এই সমঝোতার কথা প্রথম জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা অপসারণ ও উত্তেজনা প্রশমন নিয়ে পরে দুই দেশ আলোচনা করবে।
রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগ দেওয়ার আগে এই সীমান্ত সমঝোতার ঘোষণা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ওই সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও যোগ দিচ্ছেন। সম্মেলনের অবসরে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হওয়ারও একটা সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। তাতে দুই দেশেরই একাধিক জওয়ান হতাহত হন।
ওই সংঘর্ষের আগে থেকেই অভিযোগ আসছিল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে চীনা ফৌজ ভারতের ভূখণ্ডে অনেকটাই ঢুকে এসেছে। তা প্রতিহত করতে গিয়েই সংঘর্ষ। সেই থেকে সীমান্তে স্থিতাবস্থা ফেরানোর দাবি জানিয়ে আসছে ভারত। দুই দেশের সেনাবাহিনী ও কূটনৈতিক স্তরে অনবরত আলোচনাও হচ্ছে। কিন্তু ভারতের দাবি অনুযায়ী আজও ২০২০–পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা ফিরে আসেনি।
গতকাল সোমবার বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছিলেন, টহলদারি–সংক্রান্ত এই সমঝোতার পর সেনা অপসারণ নিয়েও কথাবার্তা চূড়ান্ত হবে। আজ মঙ্গলবার চীনের বিবৃতিতেও সেই আভাস পাওয়া গেল।
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গে বলেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রাক্ ২০২০ স্থিতাবস্থা ফিরে এলেই সীমান্ত থেকে সেনা সরানো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে। তার আগে নয়।
দ্বিবেদী বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের অবস্থানে চীনা ফৌজকে ফিরে যেতে হবে। আপাতত সেনারা পারস্পরিক বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট। পুরোনো অবস্থানে দুই দেশের সেনারা ফিরে যাওয়ার পরেই সেনা কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সীমান্তেও নজরদারি চালানো হবে স্বাভাবিকভাবে।
গালওয়ান সংঘর্ষের পর লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনা উপস্থিতি প্রবলভাবে বেড়ে যায়। ভারত প্রায় ৬০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। প্রায় সমপরিমাণ সেনা মোতায়েন করেছে চীনও।