তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাইয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফর ঘিরে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই সফরের আগে থেকেই সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিল চীন। এরপর গতকাল রোববার চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁর এই সফরের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, লাইয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরের কারণে তাইওয়ান ঘিরে আবারও সামরিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে চীন। এর নমুনা ইতিমধ্যেই দেখা গেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন স্পিকার গত বছরের শেষ দিকে তাইওয়ান সফর করেন। ওই সফরের আগে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছিল চীন। তবে সেই বার্তা অগ্রাহ্য করেই তাইওয়ান সফর করেছিলেন তিনি। এই সফরের পরপরই সক্রিয় অস্ত্র নিয়ে তাইওয়ান প্রণালিতে মহড়া চালায় চীনের সামরিক বাহিনী। সেই সময় তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং তাইওয়ানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে মহড়া চালানো হয়। চীনের ওই মহড়ার কারণে তাইওয়ান প্রণালিতে জাহাজ চলাচল যেমন বন্ধ ছিল, তেমনি তাইওয়ানে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসগুলো তাদের ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়। এভাবে রীতিমতো তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল চীন।
লাইয়ের এবারের সফর ঘিরেও উত্তেজনা সৃষ্টি হলো। এ নিয়ে গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটছে (তাইওয়ান ঘিরে), তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বেইজিং। আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে চীন ‘সাহসিকতাপূর্ণ ও শক্তিশালী’ পদক্ষেপ নেবে।
তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন দেশ হিসেবে দাবি করে। এই ভূখণ্ডের সবকিছু থাকার পরও জাতিসংঘের স্বীকৃতি নেই। আর চীন এই এলাকাকে নিজেদের অংশ মনে করে। চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষ্য, প্রয়োজন হলে শক্তি প্রয়োগ করে এই ভূখণ্ডকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করা হবে।
এ ছাড়া তাইওয়ানের সরকারকে স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে চীন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কারও তাইওয়ান সফর বা তাইওয়ানের কারও যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ভালোভাবে দেখে না চীন। গার্ডিয়ান–এর খবরে বলা হয়, গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে লাইয়ের একগুঁয়ে মনোভাব রয়েছে। সব দিক থেকেই তিনি সমস্যা সৃষ্টি করে থাকেন। তাইওয়ানের কারণেই তাইওয়ান প্রণালিতে উত্তেজনা বাড়ছে বলেও মনে করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী উইলিয়াম লাই। বলা হয়ে থাকে, প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের চেয়ে চীনবিরোধী তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা এই নেতা নিজেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত নেতা হিসেবে নিজেকে আখ্যা দিয়ে থাকেন। চলতি সপ্তাহেও তাইওয়ানের স্বাধীনতা নিয়ে তাইওয়ানের স্থানীয় টেলিভিশনে কথা বলেছেন তিনি। লাইয়ের মতে, তাইওয়ান চীনের অংশ নয়। তারা চীনের অধীনস্থ নয়।
একসময় যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা লাই যে দেশটি সফরে গেছেন, এমনটা নয়; তিনি প্যারাগুয়ে যাচ্ছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো পেনা দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিরতি দেন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে তাইওয়ানের পতাকা ওড়ান সমর্থকেরা।
গতকাল রোববার নিউইয়র্কে নেমে টুইটারে একটি পোস্ট দেন লাই। এতে তিনি লেখেন, ‘গণতন্ত্র, অবারিত সুযোগ ও স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠা দেশটিতে এসে ভালো লাগছে।’ নিউইয়র্কে অবতরণের পর লাই জানান, তিনি সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করবেন এবং কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
লাইয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফর কেন্দ্র করে চীনের সামরিক তৎপরতা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। গত বুধবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, তাইওয়ান ঘিরে ৩৩টি যুদ্ধবিমান ও ৬টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যেকোনো ধরনের আদান-প্রদানই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে চীন।