নেপালে মধ্যরাতের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৭

ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে বাড়ি। ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে হাঁটছেন দুই ব্যক্তি। জাজারকোট, নেপাল, ৪ নভেম্বর
ছবি: এএফপি

শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত। নেপালের জাজারকোট ও পশ্চিম রুকুম জেলার বাসিন্দাদের অনেকে গভীর ঘুমে। কেউ সবে ঘুমিয়েছেন বা নিচ্ছিলেন ঘুমানোর প্রস্তুতি। এ সময় শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে জেলা দুটি। এতে আজ শনিবার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পশ্চিমে জেলা দুটির অবস্থান। নেপাল ন্যাশনাল সিসমোলজিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, কর্নালি প্রদেশের এই দুই জেলায় গতকাল শুক্রবার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। এটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার নিচে। অন্যদিকে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্স বলেছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭।

নেপালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা রামা আচার্য শনিবার রাতে বলেন, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের ১০৫ জন জাজারকোট ও ৫২ জন রুকুমের বাসিন্দা।

মধ্যরাতের ভূমিকম্পের পর আজ সকালে শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। জাজারকোট জেলার কর্মকর্তা হরিশ চন্দ্র শর্মা বলেন, অন্তত কয়েক শ আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে পারে।

ভূমিকম্পের মাত্রার তুলনায় মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে দুর্বল অবকাঠামো ও ভূমিকম্পের সময় বাসিন্দাদের প্রায় সবাই ঘুমের মধ্যে থাকার বিষয়টি বলছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

ভূমিকম্পে বাড়িঘরে ধস ও ফাটল ধরায় আতঙ্কে অনেককে খোলা জায়গায় রাত কাটাতে হয়। জাজারকোট, নেপাল, ৪ নভেম্বর

হরিশ চন্দ্র শর্মা বলেন, ‘অসংখ্য বাড়িঘর পুরো ধসে পড়েছে। অনেক বাড়িতে আংশিক ধস বা ফাটল দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা শীতের মধ্যে পুরো রাত উন্মুক্ত জায়গায় ছিলেন। ফাটল ধরা বাড়িতে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। আমিও বাড়িতে ঢুকতে পারিনি।’

এদিকে উদ্ধার তৎপরতারও তেমন গতি নেই। কারণ, ভূমিধসে সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে আগে এসব সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক ঘরবাড়ি-ভবন ধসে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা লোকজনকে বের করে আনার চেষ্টা করছেন স্থানীয় লোকজনেরা।

কর্নালি প্রদেশ পুলিশের কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র ভট্টরাই বলেন, ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো দুর্গম ও প্রত্যন্ত হওয়ায় হতাহতসহ এতে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়াটা কঠিন।