তাইওয়ানের হুয়ালিয়েনে ভূমিকম্পে হেলে পড়া ভবনে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, ৩ এপ্রিল
তাইওয়ানের হুয়ালিয়েনে ভূমিকম্পে হেলে পড়া ভবনে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, ৩ এপ্রিল

ভূমিকম্পবিধ্বস্ত তাইওয়ানে কী হচ্ছে

তাইওয়ানে গতকাল বুধবার আঘাত হানা ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৯০০-এর বেশি মানুষ। ভূমিকম্পের পর থেকে ৫০ জন শ্রমিক নিখোঁজ। তাঁরা মিনিবাসে করে একটি জাতীয় উদ্যানের হোটেলের দিকে যাচ্ছিলেন।

গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৮টার ঠিক আগে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ান। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল হুয়ালিয়েন শহরের ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে অবস্থিত হুয়ালিয়েন শহরে কয়েকটি ভবন হেলে পড়েছে। গতকাল কিছু মানুষ তাঁবুতে রাত কাটিয়েছেন। আবার কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। জরুরি সেবাবিষয়ক কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোকে ঠিক করার চেষ্টা করছেন। যেসব ভবনকে সংস্কার করা সম্ভব নয়, সেগুলোকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।

হুয়ালিয়েনের ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপপ্রধান লি লুং-শেং বলেন, ‘আমাদের পেছনে থাকা ইউরেনাস ভবনটি অত্যন্ত বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটির বেসমেন্টের পর আরও ৯টি তলা ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় তলা মাটির নিচে চলে গেছে।’

হুয়ালিয়েন শহরের মেয়র হসু চেন-ওয়েই বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো থেকে বাসিন্দা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চারটি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

তাইওয়ানের আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলেছেন, ভূমিকম্পের পর ৫০টির বেশি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে।

হুয়ালিয়েনের ৫২ বছর বয়সী বাসিন্দা ইউ বলেন, ‘আমি পরাঘাত নিয়ে ভীত। না জানি কতটা ভয়ংকরভাবে কম্পন হবে।’

পরাঘাতের আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন ইউ।
বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, হেলে পড়া ভবনে আটকে পড়া বাসিন্দাদের জানালা দিয়ে বের করে আনতে উদ্ধারকর্মীরা মই ব্যবহার করছেন। ভূমিকম্পের কারণে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে পাতাল ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে ইতিমধ্যে বেশির ভাগ লাইনেই চলাচল শুরু হয়েছে।

অগ্নিনির্বাপণ কর্তৃপক্ষ বলেছে, হুয়ালিয়েন শহরের কাছের সুড়ঙ্গে আটকে পড়া প্রায় ৭০ জনকে ইতিমধ্যে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুজন জার্মান নাগরিকও আছেন।

তবে চারটি মিনিবাসে থাকা ৫০ জন শ্রমিকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের খুঁজছেন উদ্ধারকর্মীরা। আরও ৮০ জনকে একটি খনি এলাকায় আটকে পড়েছেন। তবে তাঁরা খনির ভেতরেই আছেন কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাহাড়ি সড়কপথে ভূমিধস হয়েছে। পাহাড় থেকে বিশাল পাথর আলগা হয়ে রাস্তায় পড়েছে।

তাইচুং শহরের অগ্নিনির্বাপণ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা একটি ট্রাক থেকে অজ্ঞান অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে। তাঁর বয়স ৫০-এর কোঠায়।

তাইওয়ানে গত ২৫ বছরের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর আগে ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাইওয়ানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। তাতে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়।

গতকাল ভূমিকম্পের পরপরই তাইওয়ান, জাপান ও ফিলিপাইনে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। তবে পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।