জাপানের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসরত পুরুষদের বিয়ে করার ব্যাপারে নারীরা কম আগ্রহী। তাই গ্রামের পুরুষদের বিয়ে করতে উৎসাহী করে তুলতে নারীদের নগদ প্রণোদনা দেওয়ার একটি পরিকল্পনা হাতে নেয় দেশটির সরকার। এমনকি দাম্পত্য সঙ্গী খোঁজার জন্য নারীদের বিনা মূল্যে ট্রেনের টিকিট দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল সরকারের। তবে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। তাই সেই পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে আজ শুক্রবার জানিয়েছেন দেশটির এক মন্ত্রী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানে গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে। বিশেষ করে নারীর সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনকহারে। গ্রামে জনসংখ্যা বাড়াতে বিশেষ করে নারী–পুরুষের সমতা আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে রাজধানী টোকিওর বাইরের পুরুষদের বিয়ে করলে নারীদের সর্বোচ্চ ছয় লাখ ইয়েন (বাংলাদেশে মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন আমলারা।
গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা ও জন্মহার কমসহ এসব বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য জাপান সরকারের বিশেষ একটি মন্ত্রণালয় আছে। সেই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হানাকো জিমি আজ শুক্রবার জানিয়েছেন, গ্রামীণ পুরুষদের বিয়ে করলে নারীদের নগদ প্রণোদনা দেওয়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা ‘পুনরায় বিবেচনা’ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রণোদনার পরিমাণ নিয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা সত্য নয় বলেও তিনি দাবি করেছেন।
গ্রামীণ পুরুষদের বিয়ে করলে কী পরিমাণ প্রণোদনা দেওয়া হবে, সরকার তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার আগেই এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে হাস্যরস ও ব্যাপক সমালোচনাও হয়।
সরকারের এই পরিকল্পনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একজন যেমন লিখেছেন, ‘তারা (সরকার) কি ভেবেছে যে একজন শহুরে, স্বনির্ভর ও শিক্ষিত নারী ছয় লাখ টাকার কথা শুনে গ্রামে চলে যাবে এবং একজন গ্রামীণ পুরুষকে বিয়ে করবে। এটা হয় নাকি?’ আরেকজন লিখেছেন, ‘যারা নারীকে শুধু সন্তান জন্মদানের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, তাদের মাথা থেকেই এমন চিন্তা আসতে পারে।’
বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জাপানের অনেক গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা সংকট তৈরি হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো উচ্চশিক্ষা ও ভালো চাকরি পাওয়ার আশায় গ্রাম ও ছোট ছোট শহরগুলো থেকে তরুণদের তুলনায় তরুণীরা বেশি বড় বড় শহরগুলোয় পাড়ি জমাচ্ছেন, বিশেষ করে টোকিওতে। ছোট ছোট শহরগুলোয় শিশুদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। ছোট এমন অনেক শহর আছে, যেখানে কোনো শিশুই নেই।
গত এপ্রিলে জাপানের গ্রামীণ এলাকার জনসংখ্যা নিয়ে একটি গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, দেশটির মোট পৌর এলাকার ৪০ শতাংশের বেশি ‘জনশূন্য’ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কারণ, এসব এলাকায় বয়স বিশ ও ত্রিশের কোটায়—এমন নারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে।