অভিযোগের মুখে পড়তে যাচ্ছে ৩ পুলিশ সদস্যসহ ৬ জন

ইন্দোনেশিয়ার মালাং শহরের স্টেডিয়ামে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে
ফাইল ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশে ফুটবল স্টেডিয়ামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ১৩১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ছয়জন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা ও আয়োজকেরাও রয়েছেন। দেশটির পুলিশপ্রধান এ তথ্য জানান বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড হতে পারে।

১ অক্টোবর রাতে মালাং শহরের কানজুরুহান ফুটবল স্টেডিয়ামে আরেমা এফসি ও পেরসেবায়া সুরাবায়া নামের দুটি ক্লাবের মধ্যে খেলা ছিল। খেলায় আরেমাকে ৩–২ গোলে হারায় পেরসেবায়া। এরপর আরেমার দর্শকেরা মাঠে নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তাঁদের থামাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এতে দর্শকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মাঠ থেকে বের হতে গিয়ে অনেকেই পদদলিত হন।

এ ঘটনা জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ক্ষোভটা বেশি পুলিশের ওপরই। এর পরিপ্রেক্ষিতে মালাংয়ের স্থানীয় পুলিশপ্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং নয়জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এখন যাঁরা অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁরা ফুটবল সমর্থকদের ওপর গুলি ছুড়েছেন।  এ ছাড়া রয়েছে হোম ক্লাব আরেমা এফসির আয়োজক কমিটির প্রধান এবং ক্লাবের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একজন।

দেশটির পুলিশপ্রধান লিস্টিও সিগিত প্রবোও স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের সহকর্মীদের কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার নির্দেশ দেন। আর তৃতীয়জন যিনি ফিফার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে জেনেও কোনো বাধা দেননি। সেই আইনে বলা আছে, কোনো ফুটবল ম্যাচে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া যাবে না।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেই রাতে বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট ও সনৈক প্রায় ২ হাজার কর্মকর্তা স্টেডিয়ামে ছিলেন।

সেদিন রাতের মাঠের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, খেলা শেষে বাঁশি বাজানোর পর আরেমা এফসির সমর্থকেরা মাঠে নেমে আসেন। তাঁদের ঠেকাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয় সমর্থকদের। এ থেকে বাঁচতে সবাই দ্রুত স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর চেষ্টা করেন। এতে সরু প্রবেশপথগুলোয় হুড়োহুড়ি লেগে যায়। সবাই ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এতে অনেকেই পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান। দেশটির নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, হতাহতদের মধ্যে ৩ থেকে ১৭ বছরের শিশু রয়েছে।

অনলাইন ফুটেজে দেখা গেছে, দর্শকেরা পালানোর জন্য মাঠের বেষ্টনী অতিক্রম করার চেষ্টা করছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে মেঝেতে লাশ পড়ে আছে।

পুলিশের কর্মকাণ্ডবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জ্যাকি বেকার ঘটনার পর বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘আমরা দেখেছি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা মাঠে ছুটে গিয়ে সেখানে জড়ো হওয়া লোকজনকে লাথি মারছিলেন, আঘাত করছিলেন। এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য আচরণ।’

তবে পুলিশ বলেছে, ক্লাবের কর্মকর্তারা নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নেয়নি। স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল। একই সঙ্গে মাঠ থেকে বের হওয়ার ফটকগুলো বেশ সরু ছিল বলে তারা যোগ করে।