করোনার জরুরি অবস্থা থাকবে না

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আশা করছে, আগামী বছর থেকে করোনাকে কেন্দ্র করে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা আর থাকবে না। গত বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে চীনকে করোনাবিষয়ক তথ্য সরবরাহের আহ্বান জানানো হয়। এই মহামারি কীভাবে শুরু হয়েছিল, তা জানতে এই তথ্য চাইছে সংস্থাটি।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর তিন বছর পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাস থেকে যাবে। তবে তা থাকবে শ্বাসযন্ত্রের সাধারণ রোগ হিসেবে। অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগ যেভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়, এই রোগও সেভাবেই ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাসে মৃত্যু কমেছে। এক বছর আগে করোনায় যত মানুষ মারা যেত, এখন তা এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। তবে এই হার এখনো অনেকটাই বেশি।

তেদরোস আরও বলেন, গত সপ্তাহে করোনায় ১০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। মানুষের জীবন বাঁচাতে এখনো অনেক কিছু করতে পারে বিশ্বের দেশগুলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, ‘আমরা অনেক পথ পেরিয়ে এসেছি। আমরা আশাবাদী, আগামী বছরের কোনো এক সময়ে আমরা বলতে পারব যে করোনাভাইরাস এখন আর বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা নয়।’

আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটি বৈঠকে বসবে। এই কমিটি মূলত তেদরোসকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। কমিটির সদস্যরা জরুরি পর্যায়ের সমাপ্তি ঘোষণা করার মানদণ্ড নিয়ে আলোচনা করবেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি প্রধান মারিয়া ভ্যান খারকোভ বলেন, আগামী বৈঠকে জরুরি কমিটির বিশেষজ্ঞরা করোনা মহামারি, অমিক্রন ধরন ও এর প্রভাবের মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন।

খারকোভ বলেন, করোনাভাইরাসে নতুন ঢেউ আবার আসার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এই মহামারি শুরুতে যেমন ছিল, তেমন আর হবে না। এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। যাঁরা এখনো টিকা নেননি বা টিকার ডোজ পূর্ণ করেননি, কেবল তাঁদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি।

খারকোভ আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ এখনো করোনার টিকা পাননি।

করোনার উৎস

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৫ কোটি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ লাখ মানুষ মারা গেছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তেদরোস বলেন, বিশ্ব করোনার জরুরি অবস্থা সমাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিশ্বের অনেক মানুষের এখনো করোনার উপসর্গ রয়েছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনা কীভাবে শুরু হয়েছিল, তা জানা জরুরি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তেদরোস বলেন, ‘আমরা চীনের কাছে করোনার উৎস সম্পর্কে জানার জন্য তথ্য চেয়ে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত করোনার উৎস সম্পর্কিত সব ধারণা নিয়েই কাজ চলছে। এর মধ্যে উহানের একটি গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্বটিও রয়েছে।’

আশা জোগাচ্ছে নতুন টিকা

তেদরোস বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ভাইরাসটি আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে গেছে এটি। তাই এটি সহজে যাচ্ছে না। তাই অন্য শ্বাসযন্ত্রের রোগের মতোই এটি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি শিখে নিতে হবে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক প্রধান কেট ওব্রায়েন বলেন, ‘এখানকার টিকাগুলো নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। এই টিকা এখনো করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। যে টিকা করোনা সংক্রমণ ও স্থানান্তরের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা দেবে, আমরা তেমন টিকার খোঁজে রয়েছি।’

এমপক্স কমছে

আগে মাঙ্কিপক্স হিসেবে পরিচিত ‘এমপক্স’ ভাইরাসের সংক্রমণ কমছে বলেও জানিয়েছেন তেদরোস। তিনি বলেন, এ বছর ভাইরাসটি মানুষকে চমকে দিয়েছে। তবে কোভিডের মতোই এর জরুরি পরিস্থিতি আগামী এক বছরের মধ্যে তুলে নেওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১০টি দেশে ৮২ হাজার মানুষের এমপক্স শনাক্ত হয়েছে। তবে এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার কম। বিশ্বে এমপক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৫ জন। তেদরোস বলেন, গত জুলাই মাসে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্তের হার ৯০ শতাংশ কমে এসেছে। এই হার চলতে থাকলে আগামী বছর এর জরুরি অবস্থা সমাপ্ত ঘোষণা করা যাবে।