সৌদি আরব ও চীন দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি ও সরাসরি বিনিয়োগে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়া দুই দেশের নেতারা সৌদি ভিশন–২০৩০ এবং বেইজিং রোড অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভের লক্ষ্য অর্জনের ঐক্যেও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। বৃহস্পতিবার সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে তিন হাজার কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরের কথা। তিন দিনের সফরে গত বুধবার সৌদির রাজধানী রিয়াদে পৌঁছান চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এ সময় নানা আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে তাঁকে গ্রহণ করে সৌদি আরব।
সফরের দ্বিতীয় দিন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। করোনা মহামারিতে চীন ও সৌদি আরব দুই দেশের অর্থনীতিই হোঁচট খেয়েছে। অর্থনীতি চাঙা করতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করতে চাইছে চীন। এর অংশ হিসেবে প্রায় ছয় বছর পর সৌদি সফর করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এদিকে দুই দেশের এই কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার উদ্বেগ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
সি চিন পিংয়ের এই সফরে শুধু দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ই গুরুত্ব পাবে না। সফরকালে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট। আজ শুক্রবার ছয় সদস্যবিশিষ্ট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলে (জিসিসি) রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করার কথা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশের প্রধানের।
জিসিসি সম্মেলনের ফাঁকে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, সুদানের নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠক হওয়ার কথা।
অন্যদিকে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি, মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখনাউচ ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতিও জিসিসি সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তেল উৎপাদানকারী দেশ। অন্যদিকে চীন সৌদি তেলের প্রধান ভোক্তা। দীর্ঘদিন ধরে সামরিক সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল সৌদি আরব। কিন্তু সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে চীন।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, সৌদি-চীনের মধ্যে ৩৪টি বিনিয়োগ চুক্তি সই হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, তথ্য ও প্রযুক্তি, পরিবহন ও অবকাঠামো খাত।
এদিকে সৌদির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আল-আখবারিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের ২০টি চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল।
সৌদি সরকারের ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নে চীনকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে দেখছেন যুবরাজ সালমান। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার ও বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলোতে চীনা কোম্পানির সম্পৃক্ততা বাড়াতে চাইছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ এসব মেগা প্রকল্পের মধ্যে আছে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের ‘ফিউচারিস্টিক’ মেগাসিটি। প্রযুক্তিনির্ভর শহরটিতে ঢুকতে হলে মুখ শনাক্ত ও নজরদারির প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সৌদি আরব সফরে দুই দেশের মধ্যে কয়েক হাজার কোটি ডলারের চুক্তি সই হতে যাচ্ছে।